Monday, December 31

অণুগল্প : জয়দীপ চক্রবর্তী






উদ্যোক্তা


রাত্তির বেশ ঘন হয়ে এসেছে । হঠাৎ ফোন । নম্বরের সঙ্গে নামও ফুটে উঠেছে স্ক্রিনে। খানিকটা বেশি সম্ভ্রম দেখিয়েই বললুম, 'হ্যাঁ কাকু বলুন ।'

ওদিকে গম্ভীর গলা,  'শোনো আসছে রোববার অমুক হলে তমুক কবির জন্মশতবর্ষ উদযাপনের আয়োজন করেছি।'

'বাঃ খুব ভালো উদ্যোগ । ওঁকে তো আজকের কবিতা পাঠক ভুলতেই বসেছেন প্রায় । আপনি যে মনে করে...'

'সে তো বটেই', আমাকে থামিয়ে দিয়ে তিনি বলেন,  'আমি তো আপ্রাণ চেষ্টা করছি এ অঞ্চলের সাহিত্যচর্চার ধারাটাকে ধরে রাখতে । কিন্তু তোমাদের সাহায্যও তো চাই । আমি একা আর কত করব।'

'সে তো বটেই ।'

'শোনো ওদিন কবির সামগ্রিক কবিতা চর্চার ওপরে আধ ঘণ্টাটাক বলতে হবে তোমাকে । আর দু একজনকে বলেছিলাম কিন্তু তাদের দিয়ে হবে না । তুমি তো কবিতা টবিতা লিখতে একসময় । তুমি ঠিক পারবে।'

'কিন্তু কাকু আমার যে ওইদিন অন্য একটা কাজ আছে। রোববার তো থাকব না আমি।'

'না না তা বললে চলবে না । তোমাকে বলতেই হবে । আমি কার্ডে নাম ছেপে দিচ্ছি ।'

ফোন কেটে গেল । তাঁকে ঘুরিয়ে ফোন করতে ফোন কেটে দিলেন ।

অগত্যা যেতে হল। বলতেও হল। শ্রোতাদের হাততালি জানান দিল বক্তা হিসেবে ফেল করে বসিনি । কাকুর মুখেও চওড়া হাসি।

মঞ্চ থেকে নেমে চা খাচ্ছি । কাকুর পরিচিত একজন বাচিক শিল্পী শতবর্ষে পৌঁছনো কবি সম্পর্কে কাকুর লেখা দীর্ঘ কবিতা পাঠ করছেন তখন । কাকু আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে নীচু গলায় ডাকলেন,  'জয়দীপ- --'

'হ্যাঁ বলুন ', আমি তাঁর দিকে তাকালাম ।

'নিজে মুখে বলতেও খারাপ লাগে । তুমি বুদ্ধিমান ছেলে । বোঝোই তো সব। অনুষ্ঠান করতে কত খরচ। কাজেই যদি কিছু দিতে----'

'মানে?' চমকে উঠে বলি।

'এত বড় একটা এক্সপোজার পেলে...এত বড় মঞ্চ । শ পাঁচেক টাকা অন্তত আমাদের সংগঠনকে দিও। এক্ষুনি দিতে বলছি না । পরে কখনও ...'

বিরক্তি চেপে রাখা মুশকিল হচ্ছিল । তবু শান্ত কণ্ঠে বললুম, 'এখানে বলার জন্য যে টাকাটা আমার চাওয়া উচিৎ ছিল সেটাই অনুদান হিসেবে ধরে নিন।'

কাকু আকাশ থেকে পড়লেন, 'তুমি কি সেলিব্রিটি লেখক নাকি যে তোমাকে দিয়ে বলালে সাম্মানিক দিতে হবে! বরং এত বড় একটা সুযোগ পেলে নিজেকে প্রকাশ করার ....'

বাড়ি ফিরছি যখন, শুনলুম হতাশ গলায় পাশে দাঁড়ানো সংগঠনের আর এক কর্মকর্তাকে কাকু বলছেন, 'লেখক হিসেবে কেউ চেনে না তাতেই এই, বড় কাগজে  দু পাঁচটা লেখা বেরোলে এরা যে কী করবে কে জানে! '


No comments:

Post a Comment