Monday, December 31

গল্প : গোপা মুখোপাধ্যায়




সময় অসময়

ফোনের কথা শেষ হতেই সামনের ফাইবারের চেয়ারে থপ করে বসে পড়লেন শিবদাসবাবু। অনেকক্ষণ বাইরের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে রইলেন। তারপর ধীরপায়ে ঘরে ঢুকলেন। দেয়ালে ঝোলানো কাঁধ ব্যাগটার থেকে ব্যাঙ্কের পাশবইটা খুলে দেখে মনে মনে হিসেব কষতে শুরু করলেন। এবার খাতা পেন বের করে তাড়াতাড়ি কি সব লিখে ফেললেন সন্তর্পণে। যাতে স্ত্রী সুপর্ণা কিছু বুঝতে না পারে। এসব কথা ও জানতে পারলে খুব কষ্ট পাবে। একবার ঘরের সিলিঙ এর দিকে তাকালেন। এবারের বর্ষায় পুরো ঘরে জল সোপ করেছে। কোথাও কোথাও জল টপটপ করে ঝরছে। আজ অনেকদিন ধরে ফেটে আছে, কিন্তু রিপেয়ার করার সামর্থ্য নেই। ঘরের সামনের দিকের প্লাস্টারে আর রং নেই বললেই চলে। জল সোপ  করে চারদিক ছোপ ধরে গেছে। এবার একটু রং করানোর কথা ভাবছিলেন, কিন্তু তা আর হয়ে উঠবে না।


সাঁতরাগাছিতে নেমে পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ শিবদাস বাবুর বাড়ি। ছোট্ট এক টুকরো জমির ওপর দু কামরার ঘর.পুরো ঘরটা স্যাঁতসেতে। পাশের জলা থেকে এ সময় ব্যাঙের ডাক তাদের সব সময়ের সঙ্গী. ঘরের ভেতর একটা হলুদ বাল্ব চলছে এতে ঠিকমত পড়া যায় না বলে টিউবলাইট এর সুইচটা অন করলেন শিবদাস বাবু। অনেকক্ষণ দপদপ করে শেষ পর্যন্ত জ্বলল। পকেট ডায়েরিটা বের করে ফোন নং খুঁজতে লাগলেন। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলেন ওই নম্বরটা এখন আর নেই। অগত্যা আর কি করবেন ভাবতে বসলেন।

এই দুর্দিনের বাজারে কি করে চালাবেন সংসার! সবই তো কেনা আর তার ওপর নিজের প্রেসার সুগারের ওষুধ ১২ মাস খেতে হয় তাতেও সারা মাসে দেড় হাজারের মতো খরচ.

সুপর্ণা রাতের রান্না সেরে ঘরে ঢুকলো।  কাপড়ের খুঁটে হাত মুছতে মুছতে স্বামীর দিকে তাকিয়ে একটু আবদারের সুরে বললেন" কি বৃষ্টি পরছে দেখেছো, এ সময় খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করে।"

শিবদাস বাবু আসল কথা গোপন করে বললেন "হ্যাঁ"

গলায় উৎকন্ঠা নিয়ে সুপর্ণা বলল," কিন্তু সারা ঘরটায় যে জল পরছে গো! "

এক বুক চিন্তা নিয়ে শিবদাস বাবু বললেন," সেটাই তো ভাবছি। এবার পিচচট না দিলেই নয়। আজ সারা ঘরের মধ্যে জল ঢুকে যাবে।"

 সুপর্ণা গলায় চিন্তা আর আবদার জরানো কন্ঠে বলে উঠল "তাই তো দেখছি। তবু কাল বাজারে গেলে যদি একটু গোবিন্দভোগ চাল আনতে পারো। "

 সারারাত অবিশ্রান্ত বৃষ্টি পাসের জলা থেকে ব্যাঙের ডাক দ্বিগুন জোরে শোনা যাচ্ছে।

সকালে চা খেয়ে শিবদাস বাবু বাজারের থলেটা হাতে নিয়ে বের হলেন। বিক্রেতাদের কাছে আনাজ পত্রের দাম জিজ্ঞেস করে আর কিনতে পারেন না। পকেটের ৫০ টাকার নোট একবার বের করেছেন আবার সযত্নে পকেটেই রেখে দিচ্ছেন। শেষে একটা লাউ শাকের ডগা আর কিছু কুঁচো মাছ কিনে বাড়ি ফিরলেন।

স্বামীর হাত থেকে বাজারের থলেটা নিয়ে সুপর্ণা আগ্রহ ভরে দেখে মুখটা ম্লান হয়ে গেল। সান্তনা দেবার জন্য শিবদাস বাবু বললেন, "এত বৃষ্টিতে বাজার বসেনি আর দোকানগুলো বন্ধ তাই। "

 সুপর্ণা বাজার গুলি নিয়ে চলে যায়।

খাওয়া সেরে দুজনে বসে আছেন। এমন সময় শিবদাস বাবু জিজ্ঞেস করলেন "তোমার শরীরটা ঠিক আছে তো? এই বর্ষায় সাবধানে থাকবে।" আসল কথাটা মনের ভেতরেই রয়ে যায়।

সুপর্ণা বলে" হ্যাঁ আমি ঠিক আছি। তুমি নিজের শরীরটা দেখো।"

শিবদাস বাবু বলেন "আমার মনে হয় প্রেসারের ওষুধ টা বন্ধ করতে হবে আবার।"

 সুপর্ণা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে "কেন কি হল তোমার?"

 শিবদাস বাবু উদাসীনভাবে বলেন "না অনেকদিন ধরে খাচ্ছি তো।" মনে মনে হিসাব করেন "তাহলে মাসে মাসে তিনশ টাকা করে বাঁচবে "।

সুপর্ণা বলে "দেখো তুমি যা ভালো বুঝবে। "

শিবদাস বাবু একটু মনে মনে ভাবেন ভাগ্যিস সুপর্ণা একটু কম বোঝে তাই ওর ভাবনার জগৎ টাও বেশ ছোট।

 আকাশটা আবার কালো হয়ে এল। মনে হচ্ছে এক্ষুনি জোর বৃষ্টি নামবে। নিম্নচাপ  সরেনি। এখনো বাহাত্তর ঘন্টা। ঘরের মধ্যে ভিজে জামা কাপড় চারদিকে মেলা কিন্ত এখনো শুকোয়নি। নিচের একহাত উঠোনে চামেলী ফুল গাছের সরু ডাল টা মাথা নাড়াচ্ছে। এটা খোকার হাতে লাগানো তাই সুপর্নার খুব যত্ন এই গাছে। সুপর্ণা  চা নিয়ে আসে। এ সময় আর বিস্কুট নেয় না। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে স্বামীর দিকে তাকিয়ে সুপর্ণা বলে" খোকা কাল ফোন করেছিল?"
শিবদাস বাবু উত্তর দেন "হ্যাঁ করেছিল। "
সুপর্ণা হাসিমুখে বলে "ওরা ভালো আছে তো? আমার বউমা নাতি?" উদাস চোখে তাকিয়ে বলে" কত দিন দেখিনি ওদের।"
"হ্যা সবাই ভালো আছে কিন্তু খোকা চাকরিটা....."
 "কি হয়েছে খোকার চাকরির?"
শূন্য দৃষ্টি ভাসিয়ে শিবদাস বাবু বলেন "খোকা চাকরিটা আর নেই।"

যেন পায়ের তলা থেকে মাটি টা সরে গেল। সুপর্নার মুখ দিয়ে একটা কথা ও বের হল না। শিবদাস বাবু সুপর্নার হাতটা ধরে বললেন," ওর কাছ থেকে সামনের মাসে আর কি করে টাকা চাইবো বলতে পারো?"
সুপর্ণা বলে "তাহলে কি হবে!"
শিবদাস বাবু কোন বড় চাকরি করতেন না। একটা ছোট কোম্পানিতে চাকরি করে ছেলেকে মানুষ করেছেন। টাকা পয়সা জমাতে পারেননি কোন রকম খেয়ে পরে কেটেছে।

তাই ভাবছেন খোকার চলবে কি করে! তিনজনের সংসার!
সকালেও আকাশটা ঘোর কালো। খাবার ইচ্ছে নেই কারোরই ওদের। তবুও সুপর্ণা হাঁড়িটা চাপালো গ্যাস এ। আজ কোন আবদারই সাজে না ওর। শিবদাস বাবু তার ছেড়া ছাতাটা নিজেই সুচ সুতো নিয়ে সেলাই করতে বসে গেলেন। এই বৃষ্টিতে বাইরে গেলেই ছাতার একান্ত দরকার।

মোবাইলটা বেজে উঠলো। একসাথে দুজনে উঠে দাঁড়ালেন ছেলের ফোন ভেবে। ওপাশ থেকে খোকার গলা.....
"বাবা একটা কাজ জোগাড় করেছি অনেক কষ্টে। "
শিবদাস বাবু যেন তৃষ্ণা'র জল পেলেন এমন গলা করে বললেন "কোথায় রে? কোন কোম্পানি? "
খোকা আশ্বস্ত গলায় বলে "বাড়ি থেকে আধঘন্টা। তাও জয়েন করে নেব কাল।"
 উৎসুক হয়ে শিবদাস বাবু বলেন "কত স্যালারি দেবে?"
 ছেলে উত্তর দেয় "এখন কম হলেও পরে কাজ দেখে বাড়বে। কিন্তু এখন তোমাদের টাকা মানে....."
 বুঝতে পারেন শিবদাস বাবু বলেন" ঠিক আছে বাবা। তুই আমাদের জন্য চিন্তা করিস না। আমাদের চলে যাবে। বুড়ো বয়সে আমরা কতই বা আর খাব। "বলতে বলতে গলাটা ধরে যায় শিবদাস বাবুর দুটো চোখ ভিজে যায়।

 খোকা বলে "তোমরা কিছু মনে কোরো না বাবা। আমি কাজে জয়েন করে ছুটি পেলে তোমাদের দেখে আসব"।
 শিবদাস বাবু বলেন "তোর নিজের বাড়ি বাবা, যখন খুশি আসবি।"

ফোনটা কেটে সব বলেন সুপর্ণাকে। হতাশ হয়ে দুজনেই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন।

শিবদাস বাবু খবরের কাগজ পড়তে যান সামনের চায়ের দোকানে। আজ আর চা খান না শুধু খবরের কাগজ তাই চোখ বুলিয়ে উঠে পড়েন। এমন সময় একটি মাঝ বয়সী মেয়ে এসে দাঁড়ায় হাতে কুচো মাছের ঝুরি। শিবদাস বাবুকে দেখতে পেয়ে বলেন "দাদু আজ মার্চ নেবেন না? "

শিবদাস বউ বলেন "না গো, কাল অনেকটা মাছ কিনেছি, আজও আছে। অন্য দিন নেব "।এটা বলে ভাবেন, আজকাল আমিও কেমন বানিয়ে মিথ্যে বলতে পারি। আগে তো পারতাম না। সময় বোধ হয় সবকিছু শিখিয়ে দেয।় নিজের মনে রাস্তা পার হলেন।

 এখানে দর্জি পাড়ায় কত বুড়ো মানুষ চোখে তেমন দেখতে পায় না তবুও সেলাই করে চোখে হাই পাওয়ারের চশমা পরে। পেটের দায়ে ওরা কাউকে দিয়ে সুচ সুতো করিয়ে নিয়ে সেলাই করে। এমনটাও যদি শিবদাস বাবু করতে পারতেন! তাহলে হয়ত সংসারটা একটু হলেও বাগাতে পারতেন। এখন তো পুরোপুরি ছেলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে গেছেন। এসব ভাবনা ওকে আনমনা করে দেয়।

কৃষ্ণচূড়া গাছটা তে অনেক ফুল ফুটে ছিল। বহু বছর এই গাছটা আজ এতদিন ধরে সবাইকে বাতাস ছায়া দিয়ে গতকাল রাতে সমূলে উৎপাটিত হয়ে পড়েছে। গাছটা ঘিরে অনেক মানুষের জটলা। যতদিন গাছটা ছিল কেউই গাছটার কদর বোঝেনি। আজ ওটা পড়ে যেতেই ওর নিচে বসে যারা সময় কাটাতো কেউ কেউ টুকটাক রোজগারও করত তারা সবাই বেশ হতাশ। আসলে যতক্ষণ আমাদের হাতের সামনে জিনিসটা থাকে আমরা তার মর্ম বুঝতে পারি না। এটাই হয়তো আমাদের নিয়ম। তারি মাঝে কয়েক জন এসে ছোট ছোট ডালপালাগুলো কেটে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে রান্নার কাজে লাগবে।

বাড়ি ঢোকার ঠিক আগে একটি স্করপিও গাড়ি শিবদাস বাবুর সামনে এসে দাঁড়ালো। একজন ফর্সা লম্বা সুদর্শন যুবক গাড়ি থেকে নেমে ওঁকে প্রণাম করল। শিবদাস বাবু ঠিকমতো চিনতে পারলেন না সেটা বুঝতে পেরে যুবকটি নিজেই বলল, "কাকাবাবু আমি সপ্তর্ষি। উজ্জ্বলের ক্লাসমেট ছিলাম। কতবার এসেছি আপনাদের বাড়ি।"

 পুরনো স্মৃতি হাতরে শিবদাস বাবু বললেন," আরে হ্যাঁ, তোমার প্রথম বর্ষে পরীক্ষার আগে ডেঙ্গু হয়েছিল না! "

উল্লসিত যুবকটি বলে "একদম ঠিক বলেছেন কাকাবাবু। তখন উজ্জ্বল আমাকে খুব সাহায্য করেছিলো, তাই আজ আমি...."

 শিবদাস বাবু সাগ্রহে বলেন "বাইরে বৃষ্টিতে কেন বাবা, এসো আমাদের বাড়িতে এসো।"

দুজনে একসাথে বাড়িতে ঢোকে। সুপর্ণা ঠিক চিনতে পারে ছেলের বন্ধুকে। তাড়াতাড়ি এসে ওকে হাত ধরে ঘরের ভেতরে নিয়ে যায়। অনেক গল্প করে। দুপুরে কাকিমার হাতের ডাল, ভাত একটু আলু পোস্ত আর ডিম ভাজা খায় পরম তৃপ্তিতে। এর আগে কাকাবাবুর হাতে একটা কার্ড দিয়ে যায় আর বলে যায় কোন অসুবিধে হলে যেন এই নম্বরে যোগাযোগ করেন।

 সপ্তর্ষি বেরিয়ে যাবার পরই শিবদাস বাবু কার্ডটি অনেকক্ষণ হাতে নাড়াচাড়া করেন। শেষে স্ত্রীকে ডেকে মনের কথাটা বলেন।

 এদিকে সপ্তর্ষি শিবদাস বাবুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে শুধু একটা কথাই চিন্তা করছে, কাকা বাবু রা ভালো নেই।
চরম দারিদ্র্যের মাঝেও কেমন একটা আদর্শ মেনে চলার তীব্র চেষ্টা। একবারের জন্যেও তার কাছে কাকাবাবু নিজের কষ্টের কথা বলেননি। একটু সাহায্য চাইলে হয়তো সপ্তর্ষি আজ অনেক বেশি করতে পারত তার জন্য।
কিন্তু না কাকাবাবুর এই নীতির কাছে সপ্তর্ষীর সদিচ্ছা কোথায় যেন পরাজিত হয়ে যায়। তবে হার মানার পাত্র সে নয় তাতে কাকাবাবু কে ফোন করবে এটা মনে মনে ভেবে নেয়।
শিবদাস বাবু ছেলেকে ফোন করে সপ্তর্ষির কথা জানিয়ে বলেন" তুই এখানে চলে আয় বাবা। ওর কোম্পানিতে জয়েন কর। "
ছেলে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেয়" না বাবা। বন্ধুর কোম্পানিতে জয়েন করলে নিজের মর্যাদা থাকবে না। প্লিজ এ ব্যাপারে তুমি আমাকে জোর করোনা।"
 শিবদাস বাবু অনেক আশা নিয়ে ছেলেকে ফোন করেছিলেন তাই হতাশ হয়ে বললেন,
 "বাড়ি ছেড়ে এত দূরে আছিস তাই বলছিলাম।"
 খোকা বলে, "বাবা ওর এত যদি আমাদের সাহায্য করার ইচ্ছা তবে ওর কোম্পানিতে তুমি একটা টুকটাক জব চাইলে তো পেয়ে যাবে। ওকে বলে দেখো।"

শিবদাস বাবুর চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে যায।় ফোনটা রেখে সুপর্নার কাছে যান। আবার ফোনটা বেজে ওঠে তবে এবার ওপারে সপ্তর্ষির গলা "কাকাবাবু ডিস্টার্ব করলাম না তো?"
 শিবদাস বাবুর চকিত জবাব "না বাবা, তা কেন হবে বল কি বলছ।"
 সপ্তর্ষি বলে "কাকাবাবু আপনার কাছ থেকে কিছুটা সময় চাইব দেবেন তো? "
অবাক হয়ে শিবদাস বাবু বলেন "আমার তো বাবা অফুরন্ত সময।় এখন তা তোমার কি কাজে লাগবে?"
 খুশিমনে সপ্তর্ষি বলে "কাকাবাবু কাল প্লিজ একবার আমার ঠিকানায় আসতে পারবেন? আমি গাড়ি পাঠিয়ে দেবো। আপনার কোন অসুবিধা হবে না। "মনে মনে ভাবে, যদি কাকাবাবুকে কাল রাজি করাতে পারি তবে একটু হলেও উজ্জলের এ ঋণ শোধ করতে পারবো।
 শিবদাস বাবু বলেন" ঠিক আছে বাবা, আমি তৈরী হয়ে থাকবো। "
 রাতে আর দুজনের ঘুম ধরেনা শিবদাস বাবু। ভাবেন ফেরার সময় সপ্তর্ষি কে অনুরোধ করবো, যদি ওর অফিসে কোন কাজ দেয়। তাহলে আমাদের দুজনের মোটামুটি চলে যাবে।
 শিবদাস বাবু আসেন সপ্তর্ষির অফিসে। ঝাঁ-চকচকে অফিস। সেখানে নিজেকে বড়ই বেমানান মনে হলো তার।
সপ্তর্ষি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো বলল, "কাকাবাবু আজকাল বিশ্বাসী মানুষের খুব অভাব, তাই আপনি যদি আমাকে একটু সাহায্য করতেন তাহলে...."

উৎসুক হয়ে শিবদাস বাবু জিজ্ঞেস করেন" কি সাহায্য করতে হবে বল? "

আমতা আমতা করে সপ্তর্ষি বলে "আপনাকে আমার অফিসের ম্যানেজার হতে হবে। মানে প্রোডাকশন ম্যানেজার। "
বিব্রত ভাবে শিবদাস বাবু বলেন "বাবা আমার যে সেরকম কোয়ালিফিকেশন নেই। "
উদাস ভঙ্গিতে সপ্তর্ষি বলে" তাতে কি আপনি তো আমার কাকাবাবু, আর এই জন্য আপনাকে আমার কাছ থেকে একটু সাম্মানিক নিতে হবে। দয়া করে আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না কাকাবাবু। "

শিবদাস বাবু যেন হাতে স্বর্গ পেলেন। এবার আর চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না। বুকে জড়িয়ে ধরলেন সপ্তর্ষি কে মুখে বললেন," আমার এই কাজটার খুব দরকার ছিল বাবা। তুমি আমার সংসারটা কে বাঁচালে। ভগবান তোমার আরও উন্নতি করবেন। "
কাকাবাবু কে প্রণাম করে সপ্তর্ষি বলল "আজ আমার খুব আনন্দের দিন কাকাবাবু। আমি আপনাকে খুশি করতে পেরেছি। প্রতি মাসে আপনাকে ১৫০০০ টাকা সাম্মানিক দেওয়া হবে। এছাড়া আপনার যে কোন অসুবিধা হলে আমাকে বলতে দ্বিধা করবেন না। "
শিবদাস বাবু বাড়িতে আসার পথে শিব তলায় মন্দিরে প্রণাম করে এলেন। সুপর্ণা ততক্ষনে স্নান সেরে রান্না বসিয়ে দিয়েছে। স্বামী ফিরছে দেখে ছুটে গেল। ওর চোখ মুখ দেখে বুঝতে পারল কোন সুসংবাদ আছে। জিজ্ঞেস করল,
 "কি বলছিল সপ্তর্ষি? "
এক গ্লাস জল গলায় ঢেলে শিবদাস বাবু সবিস্তারে স্ত্রীকে সব বললেন। পুলকিত হয়ে সুপর্ণা স্বামীকে বলল,
 "জানো আজ সকাল থেকে একটা কালো ভ্রমর আমার চারদিকে ভো ভো করে উড়ছিল। তখন ভাবছিলাম আমার আবার কি সুখবর আসবে! এখন বুঝলাম। "
শিবদাস বাবু সুপর্ণার পিঠে হাত রাখলেন। মনে মনে বললেন, "তুমি সারাজীবন এইরকমই থেকো। "

শিবদাস বাবুর মনে হলো রোজ দিনের মত সুপর্ণা আজও একই চালের ভাত রান্না করেছে, তাও আজকের ভাত থেকে একটা কি সুন্দর গন্ধ বেরোচ্ছে।

No comments:

Post a Comment