মা পাখি ও ব্যাধ
_ তুমি কি আমাকে হত্যা করবে?
- না। আঘাত করবো।
_আমাকে আঘাত করে তুমি কি পাবে?
_আনন্দ।
_ শুধু আনন্দ!
_ না শুধু আনন্দের জন্য ও না। আসলে তুমি তোমার কাজে ফাকি দিয়েছো। তোমার কাজ ছিল আমি যখন শিকারে যাব এক ঘন্টা আর যখন ফিরবো এক ঘন্টা গান শোনানো।
_ হ্যাঁ ঠিকই বলেছো তুমি। তোমার জমির সীমানায় থাকতে দিয়েছো সেজন্য। কথা হয়েছিল সকাল বিকাল এক ঘন্টা করে গান শোনাবো।
_তাহলে বুঝতে কাজে ফাকি দিয়েছো তুমি, কর্তব্যে অবহেলা করেছো।
_ হ্যাঁ পেরেছি। কিন্তু আমি নিরুপায়। আমি তো মা। আমার ছানা পাখিটা উড়তে শেখার পর ই চিল, শকুনের খপ্পরে পড়েছিল। চিল ওকে ঠোকরানোর পরে ওর শরীর এত বিষিয়ে যায় যে ও মরেই যাচ্ছিল। ও আমার থেকে ও ভালো গান শিখছিল। কিন্তু শব্দ করতেই ভুলে গেল। আমি দিন রাত এক করে ওকে সারিয়ে তুললাম। একটু একটু গান ও গাইছিল। একদিন একটা শকুন ছো মেরে ওকে নিয়ে গেল। কিন্তু ও নখ দিয়ে আচরণ দিলে ওকে মাটিতে ফেলে দেয়। জানাটা আমার বোবা হয়ে যায়।
_ এসব শুনে আমি কি করবো? আমি বুঝি কাজ, শৃঙ্খলা। তুমি ওর বাবা পাখি কে দিয়ে ছানা পাখির দেখাশোনার ভার দিতে পারতে।
_ কি করবো বলো তাকে তো তোমার মতোই আর একজন ব্যাধি তীর মেরে একটা ডানা ভেঙে দিয়েছে। সে তো এখন ভালো করে উড়তে পারে না। তাইতো খাবার যোগারের বেশিরভাগ দায়িত্বটা আমাকে পালন করতে হয়। আচ্ছা ব্যাধ তুমি কি শুধু এই কারনেই আঘাত করবে?
_না। ঠিক তার জন্য ও নয়।
_ তবে!
_ আমাদের ব্যাধ সর্দারকে খুশি করার জন্য। সে আমাকে মস্ত বীর ভাববে।
_ তাহলে আমাকে হত্যা করে নিয়ে চলো।
_না না। তাহলে অন্য কোনো ব্যাধ দাবি করতে পারে সে তোমাকে হত্যা করেছে আর আমি তোমার দেহ ছিনিয়ে নিয়ে এসেছি। কিন্তু আঘাত করলে তুমি সর্দারকে নিজেই সে কথা বলবে যে আমিই সেই বীর।
_ ব্যাধ চিল, শকুনের ঘটনাটা র পর আমার ছানাটা বোবা হয়ে গিয়ে দুবার বিষফল খেয়েছিল এ ছানা জীবন রাখবে না বল।
_এসব তুমি আমাকে শোনাচ্ছো কেন?
_আসলে তুমি ব্যাধ হলেও তোমার কপালে রসকলি আকা। তার মানে তুমি ধার্মিক। যে ধর্ম করে তার কাছে কি আর কিছুর দাম নেই?
_ওহে পাখি শোনো ধর্ম হল একটা ঢাকনা। যে যতবেশি ধর্ম দেখাতে পারে সে তত বেশি মজবুত ঢাকনার তলায় থাকে। সেখানে কোন পক্ষীশাবক মরলো কি বাচলো তাতে আমার কি এসে যায়। সর্দার আমাকে কাজে ফাকি দেওয়া, দায়িত্ববোধহীন একটা আঘাত করেছি এ জন্য বাহবা দেবে। পুরুষ্কার ও দিতে পারে।
_ শেষবার ভাবো ব্যাধ। আমাকে আঘাত করলে আমিও খাদ্য সংগ্রহে ঠিক করে যেতে পারবো না। আমার ছানাটা না খেয়ে থাকবে। তার থেকে এক কাজ করো তুমি, ঐ চিল, শকুনটাকে আঘাত করো।
_আমার তীর অদূরে পৌঁছবে না।
_বেশ তবে আমাকেই আঘাত করো। হতে পারে আমার কান্নার শব্দে আমার ছানাটা আবার গান গেয়ে উঠতে পারে। আনন্দের না হলেও যন্ত্রণার তো হবেই। হতে পারে ওর বাবা ভাঙা ডানায় জোর পেতে পারে। আর আমি,,,,,,,,,
No comments:
Post a Comment