Monday, December 31

অণুগল্প : পূর্বা মুখোপাধ্যায়






ঘোর কলি

সকালের দিকে একেকদিন অম্বরীশের মাথাটা টলমল করে। হাই ব্লাডপ্রেশারহেতু। সেদিন আর বাজার যান না। বাজারবিলাসী অম্বরীশ  ফোন করেন মাছ মানিককে, সবজি ফেলুকে। তারপর হোয়াটস্যাপ করেন। এরা সব লিস্টি অনুযায়ী গুছিয়ে রাখে। আটটা নাগাদ সত্যবালা কাজে ঢোকে। সে তখন টাকা নিয়ে গিয়ে মাল নিয়ে আসে।

বাজারটা বাড়ি থেকে দু মিনিটও নয়। আর এই অঞ্চলেই আছেন প্রায় তেত্রিশ বছর। কাজেই সবাই চেনে । অসুবিধে হয় না।

সেদিন ঘুম থেকে উঠে ফোন করলেন। চিংড়ি দিয়ে ওলকপি আর ফুলকপি দিয়ে ভেটকির জন্য মনটা কেমন করল। প্রথম ফোনটা ফেলুকেই করলেন।

“গুমন্নিং দাদু…… হ্যাঁ হ্যাঁ বলুন…… ফুলকপি ? না না , রাখি না। ওই যে নিমাই বসে না রাস্তার ওপর , ওর থেকে নিয়ে রাখি আপনার জন্যে? …… বকোলি আছে , নিন না…”

কী কলি? প্রায় বলেই ফেলেছিলেন আর কি! তারপরেই বোধগম্য হল, অ ব্রকলি! তার ক্ষণকালের নীরবতায় ফেলু ততক্ষণে চালু আবার- “ বকোলি , বকোলি, দাদু আপনি বুঝবেন না, দিদিকে বলবেন, বলবেন রেড আর ইয়েলো বেল পেপারও রাখছি আজকাল।“

তাকে বলে দাদু আর তার মেয়েকে বলে দিদি, এই তো ভাষাজ্ঞানের নমুনা। আবার বকোলি! একটা হুম বলে কেটে দিলেন লাইনটা অম্বরীশ। মিনিট পাঁচেক থুম মেরে বসে থাকেন। ব্লাড প্রেশার ভুলে যান। মাথার ভেতরটা জ্বলছে রাগে । পাঞ্জাবীটা গলিয়ে কোলাপুরি পায়ে দিয়ে দরজার লকে চাবি ঘুরিয়েছেন সঙ্গে সঙ্গে দময়ন্তী – “আবার বেরোচ্ছ কেন? এই বললে শরীর ঠিক নেই। উফ এই বাজার বাজার করেই গেল বাঙালের গুষ্টি……আমারও যেমন কপাল…… ”

গজগজ করা দময়ন্তীকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যান অম্বরীশ। রাগলে বাঙাল পুরুষসিংহ।

বাজারে গিয়েই ওলকপি , তারপর ফুলকপি। এবার মানিকের কাছ থেকে হরিণে চিংড়ি। এটা আশা করেন নি, পেয়ে মনে হল ফেলুর মুখে একটা ঠাস দিতে পারলেন। এরপর ভেটকিও পেলেন , তাজা, ছোটো, আড়াইশো গ্রাম আন্দাজ সাইজ। এবার কড়াইশুঁটি আর টমেটো। সব কিনে এসে দাঁড়ালেন ফেলুর দোকানের সামনে।

“কাঁচা লংকা দাও তো, ভালো দেখে ঝাল হয় যেন, ঐ ঘাস ঘাসগুলো নয়, বুঝলে?” ব্যারিটোনে পাঁচশো গ্রাম মতন তাচ্ছিল্য মেশালেন অম্বরীশ।

ফেলু সদা অমায়িক। এক গাল হেসে বলল – “এই যে দাদু, বেস কোয়ালিটি এ বাজারে আমার দোকানেই পাবেন।“ বলেই “এই যে বকোলি, আর এই যে বেল পেপার, হেবি দেখতে না? আজকাল খুব ডিমান। দিদিকে বলবেন, যেদিন পেশাল রাঁধবে আমি পাঠিয়ে দেব……”

“ বলেছিলাম, কিন্তু তোমার দিদি বল্লো সে আজ চিংড়ি দিয়ে ওলকপি খাবে আর ফুলকপি-কড়াইশুঁটি দিয়ে ভেটকি। তাই নিলাম।“

“ও” টাইপ একটা মাথা নেড়ে ফেলু আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়। তাঁর এমন একটা জব্বর রিপ্লাই বৃথা গেল দেখে অম্বরীশ একটু দমে গেলেন। তারপরেই নেক্সট ইয়র্কারটা দিলেন –

“তোমার দিদি বলছিল হ্যালেপিনো, পার্সলে আর ব্ল্যাক অলিভ , এনো তো। কী সব ইটালিয়ান রাঁধবে।“

মাথা চুলকে হাঁ করে তাকালো ফেলু। ‘কেমন দিলাম’ মার্কা একটা হাসির সামান্য ছোঁয়া এনেই হাঁটা লাগালেন অম্বরীশ।

পেছন থেকে ফেলু ঠিক তখনই ডেকে বললো - “ একবার হোয়াস্যাপ করে দেবেন তো দাদু, ইংলিস নাম সব উশ্চারন হয় না।“





3 comments:

  1. অসাধারণ । মন ভালো করা।

    ReplyDelete
  2. খাসা হয়েছে

    ReplyDelete
  3. হা হা হা, দিব্য হয়েছে। বেজায় আনন্দ পেলাম পড়ে

    ReplyDelete