Monday, December 31

অণুগল্প : লক্ষ্মী নন্দী





প্রিয়দর্শিনী


প্রিয়দর্শিনীর  বুকের ভিতরটা কেমন যেন হুহু করছে। পরজীবী বিদ্রুপ যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। তমালের  সম্ভোগ সরণীতে দাঁড়িয়ে দেখতে পারছে প্রিয়দর্শিনী। এ যেন এক বিলাসের নকল নিধুবন। কিন্তু এটাতো ঠিক যে প্রিয়দর্শিনীর ভিতরে লেখার জন্য যতই তিব্র খিদা থাকুক। যতই ঘার গুঁজে পড়ার মধ্যে তৃপ্তি অনুভব করুক। সে, জানে জীবনের সব জায়গায় কম্পোমাইজ কি ভাবে করতে হয়। তবে এটাও সে  বোঝে যে মধ্যবিত্ত সংসারে একজন মায়ের কাছে তার সন্তানের - একজন  স্ত্রীর কাছে তার স্বামীর - একজন পুত্রবধূর কাছে তার শাশুড়ির ঠিক যতটা প্রত্যাশা থাকে সেই ষোলো অানা এখন অার মেটেতে পারছেনা সে। অবশ্য তার কারণ হয়ত এমনও হতে পারে নরম মাটিও তো রোদে তাপে শক্ত হয়। প্রিয়দর্শিনীর একটা বড় দোষ এক নজরে যে কেউকে অাপন করে নেওয়া। অসম্ভব বিশ্বাস করা- খুব ভালোবাসে ফেলা  অল্প চেনা জানা মানুষদের। এর জন্য শাশুড়িমা  কম বকা দেননি কতবার শাসন করেছেন বিপদের অাশঙ্কায়। অবশ্য  ইতিমধ্যে দু - এক জন মিষ্টিভাষি তাদের প্রাকটিক্যাল ব্যবহার দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে বেশি মৃষ্টি ভাষীতা হল মারাত্বক প্রতারণা ব্যাধি। এখন প্রিয়দর্শিনী ভালো লোকের মত দেখতে খারাপ লোককে একবারে চিনে ফেলে। অার সেটাই  হলো অাজকের এই ভয়ানক পরিস্থিতি হয়ে ওঠার একটা কারণ। অাসলে যে মানুষটি তখন এসেছিলেন সে এলেই সবার বাড়ির হাড়ির খবর নিয়ে এসে গরগর কর বলতে থাকেন এবং  তারপরেও অনেকক্ষণ বসে থাকেন।  যা প্রিয়দর্শিনীর একদম পছন্দ নয়। তবুও প্রিয়দর্শিনী জানে - চেয়ে থাকার থেকে সেফ প্রতিক্রিয়া অার হয় না। অাজ সে সেখানে বসে থাকেনি। চা দিয়ে ঘরে  চলে গিয়েছিল। ঐ পোশাকি ভদ্রলোক চলে যাওয়ার পর। যেটা তমালের কাছে খুব অপমান কর মনে হয়েছে সেটা তমাল এক্সপ্রেশন -  অার কথায়  অদ্ভুদ বডি ল্যাঙ্গুয়েজে বুঝিয়ে দিল। " ফেলে দাও তোমার সাহিত্য। এই নেশার জন্য মানুষকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েই চলেছে তোমার - এটা বেশ কিছুদিন ধরে দেখছি।" অবাক হয়ে তমালে দিকে তাকিয়ে প্রিয়দর্শিনী দেখছিল দুজনের জীবন দর্শনের বিবেদ। প্রিয়দর্শিনী উত্তর দিতে চাইছিল তাই যদি হয় মন্দ কি? ঐ বৃদ্ধরও তো এই বয়সে গীতা মহাভারত পড়া উচিৎ তা না করে বাড়ি বাড়ি ঘোরেন। যদিও তমাল বেশ কিছুদিন ধরে এই লেখা নিয়ে পানের থেকে চুন খোসলেই কিছুনা কিছু বলে দু-চার কথা শুনিয়ে দেওয়া শুরু করেছিল। অাজ বিরাট সুযোগ পেল যেন হাতের মুঠায়। অনেকবার প্রিয়দর্শিনী ভেবেছে ছেড়ে দেবে পড়া লেখা এ-সব। কিন্তু পারেনি । তবে অাজ মনে মনে প্রতিজ্ঞা  করে ফেলেছে অার নয় সত্যি ছেড়ে দেবে। তাই অার কিছু না বলে নিরবতার মধ্য অনেক কথা - কান্না এবং হেরে যওয়াকে লুকিয়ে রেখে মোবাইলে শেভ করা নাম গুলো দেখছিল। মনে হচ্ছিল তেমন কারো সাথে কথা বলে যদি একটু অক্সিজেন পাওয়া যায়। কিন্তু কালো মেঘের পিছনে হিংস্র চোখে তাকিয়ে থাকা তমালের বজ্রের মতোন চিৎকার যেন মনে করিয়ে দিল দেখো অামি কত বড়। সত্যি তো একটা পুরুষ ইচ্ছে মতোন বড় হতে পারে অাবার ছোটো হতে পারে। হতে পারে অভয়হীন দানব। যে দানব স্বার্থে অাঘাত লাগলে ছিঁড়ে নিতে পারে একটা নারীর হৎপিন্ড। নিঃশ্বাস নিতে বড় কষ্ট হচ্ছিল প্রিয়দর্শিনীর। কষ্ট যেন শ্বাসনালিটাকে পেঁচিয়ে ধরছিল। যত বইপত্তর সব জঞ্জালের মতো করে উঠিয়ে রাখলো প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ যাতে না হয়ে যায় সেই ভয়ে। ঠিক করে ফেলল সংসারটা চুটিয়ে করবে সে। কি হবে দু একটা গল্প কবিতা লিখে! রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে। তমালের পাশেই গিয়ে শুয়ে পড়ল প্রিয়দর্শিনী। তমাল পাশ ফিরে অালতো করে প্রিয়দর্শিনীকে জড়িয়ে ধরল। নিরুচ্চারে প্রিয়দর্শিনী বলল এখন তুমি ছোটো হলে তমাল। তবে এটা তোমার অধিকারের অধিকার।  তমাল ঘুম জড়ানো গলায় বলল কাল রবিবার - হুঁ। হুঁ মানে? -এবার অাবার প্রিয়দর্শী বলল- তো? না বলছিলাম কাল রবিবার দেড়ি করে ঘুম থেকে উঠলেই হবে। প্রিয়দর্শিনী বিষাদের প্রলোভনে পা না দিয়ে তমালকে জিতিয়ে দিল। পরদিন সারাদিন বই ছোঁয়নি এমন কি সংবাদপত্র পর্যন্ত নয়। তমাল ভালো অাছে অফিসের গল্পে। ছেলে ভালো অাছে অাড্ডা থেকে ফিরে। শাশুরি মা  কিন্তু অনেকটা সময়  প্রিয়দর্শিনীকে কাছে পেয়ে হাত সাপটে দিচ্ছিলেন। এই প্রথম সে শাশুড়ির হাতে এতো স্নেহ স্পর্শ পেল। এটাও কিন্তু প্রিয়দর্শিনীর দীর্ঘদিনের এক স্বপ্ন পুরোণ। নারীরা ইচ্ছে করলে বোধহয় সব ভাবেই খুুুঁজে নিতে পারে তার নিজস্ব অালো। নারীরা পারে পুরুষের অস্থায়ী প্রেমকে অাবার স্থায়ী করে ফেলতে।  নারীরা নদীর মতোন ঠিক করে নিতে পারে তার পরিক্রম রেখা - কক্ষ পথ।


No comments:

Post a Comment