Monday, December 31

অণুগল্প : অমিয় কুমার চৌধুরী







দাদু

বিয়ের মন্ত্র পড়া শেষ। নতুন বর-বউকে এবার বাসরঘরে তুলতে হবে। বিয়ে মন্ডপের একধারে অশীতিপর এক বৃদ্ধ চেয়ারে বসে আছেন। মাথা ভর্তি সাদা চুল, পুরু সাদা গোঁফ। পরনে সাদা ধুতি ও ফুল শার্ট। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা। দু'হাতে ধরে আছেন বেতের লাঠি দিয়ে তৈরি সে আমলের লম্বা কালো কাপড়ের ছাতা। এযেন বাঙালির ঐতিহ‍্যমন্ডিত দাদুর সংঙাকে সার্থক রূপ দিয়েছেন। দাদু চরিত্রের বৈশিষ্ট‍্যগুলো উপভোগ করছেন বিয়েবাড়িতে আসা অতিথিবর্গ। এযুগের নাতি-নাতনিদের সঙ্গে তাঁর ব‍্যবধান এক শতাব্দীর। তাসত্ত্বেও প্রাচীনত্বের কৌলিন‍্যে সকলের কাছ থেকে আদায় করে নিচ্ছে নিরব সভ্রম। একটা পৌরাণিক রূপের প্রতিমূর্তি ! এলাকার বটগাছ!

  নতুন বৌ এবাড়ীর আদরের মেয়ে। পাড়া-প্রতিবেশীদেরও প্রিয়। বিয়ের পিঁড়ি থেকে উঠে প্রথমে বৃদ্ধের দিকে এগিয়ে গিয়ে তাঁকে প্রণাম করলো সে। তারপর সদ‍্য অধিকার পাওয়া তাঁর বরকে বললো, ইনাকে প্রণাম করো। ইনি আমার দাদু।

   দাদু বললেন, কি রে বুড়ি, বর পেয়ে আমাকে ভুলে যাবি নাতো?

   - ধুস্, বুড়ো বর'কে কেউ মনে রাখে নাকি!

    দাদু ফোকলা মুখের সৌন্দর্য বজায় রেখে হাসলেন। মনে মনে হয়তো দীর্ঘ আশীর্বাদ করলেন।

        বাসরঘরে তখন জমাটি আড্ডা চলছে বর-বৌকে ঘিরে ধরে। এক ফাঁকে বর জিজ্ঞেস করল, শুনেছি তোমার কোন দাদুই বেঁচে নেই। তবে একোন দাদু?

     সবে বৌয়ের উপাধি পাওয়া মনে একটা বিরক্তির উদ্রেক হলো শাঁওলির।

সে উত্তরে বললো, দাদু সবসময় দাদুই হয়। দাদুর আবার আপন-পর বা আলাদা কোন রূপ আছে নাকি! 

No comments:

Post a Comment