Monday, December 31

মুক্তগদ্য : তরুনার্ক লাহা


      যমুনা তীরে ভগীরথের মধুচন্দ্রিমা
                             
ভগীরথ নাকি শিবের জটা ছিঁড়ে গঙ্গাকে টেনে নামিয়ে ছিল পৃথিবীর বুকে।উদ্দেশ্য বংশোদ্ধার নাকি অন্য কিছু?বেচারা ক্ষয়াটে চাঁদ তাকিয়ে ছিল ফ্যালফ্যাল করে।হা পিত্যেস করা ছাড়া কিছু নেই।চরম বোকামি।ভোগই যে দুর্ভোগের উৎস হাড়ে হাড়ে  পাচ্ছে চাঁদ ।কি দরকার ছিল ছদ্মবেশে গুরুপত্নীর সাথে ঢলাঢলি!শুধু কি তাই ঔ চাঁদ ও সূর্য দুজনেই বোকার হদ্দ।রাহু কেতু যদি বা অমৃত খেয়ে অমর হতো তাতে ক্ষতি?শুধু দুটো মাত্র অসুর।চিনতে পেরেছিস তো কি হয়েছে;তাই বলে পেছনে লাগা।অসুরগুলো সুর তাল ভুলে বেসুরো।ভাগ্যিস গলা কেটে দুফাঁক।কপাল জোরে চাঁদ সূর্যের প্রাণ বাঁচে।নাহলে তো পেটে গিয়েই হজম।
সত্যি করে কেউ বলবে পৃথিবীর বয়স বাড়ছে নাকি কমছে?বসন্ত  এলেই তো পৃথিবী  ষোড়শী ।খোঁপায় গোঁজার জন্য কত ফুল--লাল,নীল,হলুদ....।রসে টইটুম্বুর গর্ভকুন্ড।পথভোলা মৌমাছির দল।রসের টানেই সন্ধান পায় বর্ভে লুকিয়ে থাকা রসভান্ডারের।আক্ণ্ঠ পান করে তখন ফুরফুরে মেজাজ।ডানাতে লেগে থাকে পরাগরেণু ।আহা কি আনন্দ আকাশে
বাতাসে-মেজাজ নিয়ে চুপিচুপি পরাগসংযোগ।ফুলের গর্ভে তখন কিলবিল করা ভ্রুণ ।বাসাতে ফিরে যায় মৌমাছির দল।তাদের এই পরকীয়ার কথা মনেও থাকে না।পোয়াতি ফুল তখন নতুন প্রজন্মের স্বপ্নে বিভোর।রাণী মৌমাছি আড়মোড়া ভেঙে জানাতে চায় --শোনো সব কান পেতে তোমাদের সামনে যে সন্তান আসছে তাদের না থাকবে না থাকবে হুল।শুধু মধু খেয়ে আমোদিত হয়ে ঠেসে ঘুম মারবে।
চকিতে একটা স্বপ্ন দেখে সাজমহল গড়ার সিদ্ধান্ত নিই।শ্বেত পাথরের না হোক শ্লেট পাথরের হলেও ইতিহাস অশুদ্ধ হবে না।পূর্ণিমার চাঁদ এসে তাজমহলের সাথে ফস্টিনস্টি করে। শাজাহান বেঁচে থাকলে হিংসায় জ্বলে পুড়ে খাক।বেচারা!আমি কি এতই বোকা?কি দরকার ছিল শুধু শুধু বাইশ বছর হা পিত্যেস করে তাজমহল গড়ার। পত্নী প্রীতি  নাকি অন্য কিছু?কিছু বললেই তো আমি স্কন্ধ কাটা রাহু কেতু।চার্বাক শিখিয়েছে জীবন মানে ভোগ।জীবন তো একটাই।তরল জীবন ।শেষ তলানিটুকু পর্যন্ত পান করাই আমার জীবনের উদ্দেশ্যে ।লোক দেখানো একটা শ্লেট পাথরের সাজমহল গড়ে দেখিয়ে দেবো আমি কতোটা রমনীপ্রিয়।
আরে,গঙ্গার কিনারে ভগীরথ দাঁড়িয়োছে না?চোখ তার যমুনা প্রবাহে।চিক চিক করে বালি-এ যে শাজাহান !বালতি করে যমুনার জল তুলে শ্বেত পাথর গুলো ধুয়ে চলেছে।কতো যত্ন !ভগীরথ মুচকি হাসে।এখন শাঁখ বাজাবার সময়। পদ্মা সরিয়ে গঙ্গার হাত ধরে এগিয়ে চলে মহাসঙ্গমের দিকে।
আমি তাকিয়ে থাকি আমার সাজমহলের দিকে। হঠাৎ  চোখ যায় সাজমহলের চূড়ায়।একটা বিশাল মৌচাক ।সন্তান সম্ভবা রাণী মৌমাছির স্থির দৃষ্টি ক্ষয়াটে চাঁদের দিকে।ঐ চাঁদের গায়েও আঁশটে গন্ধ যুক্ত ফুলের মধু। একেই বলে মধুচন্দ্রিমা ।চুপিসারে সেটাই পান করেছিল চাঁদ ।এটাই তো সোমরস।সোমরস পান করে পাঁড় মাতাল।কান্ড জ্ঞানহীণ। তাই গুরুপত্নীকে....।হা গৌতম -বৃদ্ধস্য তরুণী ভার্জা -আপ্তবাক্যটি পড়া থাকেনি বোধহয় ।তাই চরম বোকামি।সকলের।
                       

No comments:

Post a Comment