Monday, December 31

গল্প : মনিদীপা দাস






সংসার


(১)

টেবিলের উপর থেকে জগটা নিয়ে গ্লাসে ঢালতে থাকেন সুশীলবাবু। হাতটা কেঁপে কেঁপে যাচ্ছে। খানিকটা জল চলকে পড়ে গেল টেবিলে। ধপ করে জগটা নামিয়ে রেখে গ্লাসটা তুলে ঢকঢক করে গলায় ঢালেন। আবার পড়ল ।গায়ে ।শেষ ঢোঁকটা গিলে বসে পড়লেন চেয়ারে। ওফ্ কি ভীষণ টায়ার্ড লাগছে। বুকের ভেতরটাতে হাঁফ ধরে গেছে। মাথাটা এখনও ঘুরছে। আর ভালো লাগে না। বয়স হয়েছে। শরীরটা আর দেয় না। তবু কি কেউ বোঝে? দায় দায়িত্বের শেষ নেই যে।

নাতনীটাকে যখন কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে আসছিলেন মেয়ে সুপর্ণার কাছে তখনই মাথাটা ঘুরছিল। সেখান থেকেও তো মিনিট কুড়ির রাস্তা হেঁটে কর্তা গিন্নী নিজেদের বাড়িতে ফিরলেন। গিন্নীর হাঁটুর ব্যথার জন্য ডাক্তার হাঁটতে বলেছেন। তাই বাধ্য হয়ে তাঁকেও হাঁটতে হলো। সংসারে শুধু সকলের জন্য করো আর করো। সবার জন্য করতে গিয়ে নিজের জন্যই আর কিছু করে উঠতে পারেন না। মরার আগের দিনও বোধহয় সব দায় সেরে যেতে হবে।

"কই গো তোমাকে যে বললাম দীপেনের দোকানে ফোন করে আমার  নামটা লিখিয়ে রাখো ।এরপর শেষের দিকে নাম চলে গেলে কত দেরী হয়ে যাবে বলতো?"

গিন্নীর ডাকে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়তে হলো। উফ্ কি জ্বালা ।এখন আবার ওষুধের দোকানে ফোন করে ডাক্তার দেখানোর জন্য নাম লেখাও। দিনে চোদ্দো বার মেয়েকে ফোন করতে পারে কিন্তু এবেলা যত অসুবিধা গিন্নীর ।ধুর আর ভাল্লাগে না... ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে পড়েন সুশীল সমাদ্দার।

(২)

"সব ওষুধ দিয়ে দিচ্ছি দাদা.."

"হ্যাঁ রে, দিয়ে দে একবারে ।কে আর বারবার করে আসবে বল?"

"আপনার বারবার আসার দরকার কি দাদা? পার্থকে দিয়ে আমিই তো পাঠিয়ে দিতে পারি আপনার বাড়িতে। কতবার বলেছি কিন্তু আপনি তো রাজী হন না।"

"রাজী কি এমনি এমনি হইনা রে দীপেন? বাড়িতে গিয়ে কলিং বাজালে তো আমাকেই দৌড়ে আসতে হবে। দিনে চব্বিশ বার লোকে বেল বাজাচ্ছে। তোর বৌদির হাঁটু ব্যথা তো সারাজীবনের ।চোদ্দো বার দৌড়ে এসে লোককে অ্যাটেন্ড করা এই বয়সে আর পোষায়না রে। "

" সে আর কি করবেন? আপনারা দুজনে থাকেন একটা বাড়িতে। দুজনেই তো অসুস্থ। এখন সকলেরই এক অবস্থা দাদা। "

ওষুধের প্যাকেট নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করেন সুশীলবাবু। পকেটে মোবাইল টা বেজে উঠল। মেয়ে ফোন করেছে।

" বাবা তুমি কি ওষুধ আনতে বেরিয়েছো? "

" হ্যাঁ তো ।কেন? "

" শোনো না একটা প্যাম্পার এর প্যাকেট এনো। "

" আমি চলে এসেছি রে মা। আর যেতে ইচ্ছে করছে না। পরে কিনে রাখব ।"

"উফ্ বাবা তুমি না ভীষণ কুঁড়ে হয়ে গেছো আজকাল। কিছু একটা করতে বললেই প্রবলেম হয় তোমার।"

"না রে সত্যি বলছি। আর দোকান এতক্ষণে বন্ধও হয়ে গেছে। আমি যখন ছিলাম তখনই সব বন্ধ করে দিচ্ছিল। এখন আর খোলা না থাকারই কথা। "

" তবু একবার দেখোনা বাবা.. ওটা পেলে কত সুবিধা হবে আমার বলো.. "

" ঠিক আছে ।দেখছি ।তুই রাখ তাহলে। "

মেয়েকে ফোনটা ছেড়ে দিতে বলে বাড়ির দিকেই এগিয়ে যান সুশীল। কিছুতেই আর দোকানে যাবেন না তিনি। দরকার পড়লে মিথ্যা কথা বলবেন যে দোকান বন্ধ করে দিয়েছিল।

এছাড়া কিই বা করার আছে? কেউ বুঝতে চায় না তাঁর অসুবিধেগুলো। প্রেশার টা বরাবরই হাই। হাইপারথাইরয়েড কয়েক বছর হল শরীর টা শুকিয়ে দিয়েছে ।সবসময় ক্লান্ত লাগে। বাষট্টি পেরিয়ে গেছে গত জানুয়ারি তে। তবু দায় এড়াতে পারেন না। মেয়ে জামাই দুটো পাড়া পরে একটা ফ্ল্যাট নিয়ে উঠে এসেছে গত বছর। সাথে ওদের দু'বছরের মেয়ে আছে। সে তো দাদুকে কাছছাড়া করতেই চায় না দেখা হলে। জামাই সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকে। মেয়ে সুপর্ণা বড্ড আদুরে ছোট থেকে। একটু স্বার্থপরও ।চিরকালই তার বায়না আবদারের শেষ নেই। যখন যেটা চাই তো চাই। বিয়ে করে মা হলো তবু স্বভাব বদলালো না একটুও। গত রবিবার যখন মেয়ে, জামাই, নাতনী সহ গিন্নীকে নিয়ে ফিরছিলেন স্টেশন রোড থেকে তখন নাতনী তাঁর কোলেই ছিল। জামাই ট্যাব ঘাঁটছে অটোর লাইনে দাঁড়িয়ে। গিন্নী আর তাঁর মেয়ে মোবাইল ফোন ঘেঁটে কিসব ছবি টবি দেখেছিলেন। আধঘন্টা ধরে নাতনীটাকে কোলে করে অটোর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে যে কি কষ্ট হচ্ছিল তা কেউ জানে না। জানার চেষ্টাই আসলে কেউ করে না। অটোতে ওঠার সময় গিন্নী মেয়েকে বললেন, "তিথিকে নিয়ে তুই আর রাজা চলে যা। আমি আর তোর বাবা পরের অটোতে যাচ্ছি।"

"না না.. তিথিকে বাবা আমার ফ্ল্যাটে ছেড়ে দিয়ে আসবে।"

"তোর বাবা পারবে না। কতক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে বলতো? তোর ফ্ল্যাটে গেলে ওখান থেকে আবার কতটা হেঁটে ফিরতে হবে তাইনা?"

"আরে হাঁটবে তুমি। ডাক্তার তো তোমাকে হাঁটতে বলেছে। চলো না মা ফ্ল্যাটে একটু ।একটা জিনিষ দেখাবো। "

গিন্নী আর কথা বাড়াননি। কারণ তিনি জানেন যে মেয়ে তাঁর কথায় কান দেবে না নিজে যেটা চাইবে সেটা করে ছাড়বেই।

অগত্যা মেয়ের ফ্ল্যাটে পৌঁছে নাতনীকে কোল থেকে নামিয়ে সিঁড়ি দিয়ে যখন নামছেন সুশীল হাত পা কাঁপছিল। মাথা ঘুরছিল ।গরমে অস্থির লাগছিলো বড্ড। গিন্নীকে নিয়ে হেঁটে হেঁটে বাড়িতে ফিরে সবার আগে জল খেয়ে একটু বসতে চাইছিলেন। তখনই ফোন করতে হলো দীপেনকে। দায়িত্বের কি আর শেষ আছে এ জীবনে?

(৩)

"এনেছো প্যাম্পার এর প্যাকেট?"

"মানে?" অবাক হয়ে গিন্নীর দিকে তাকিয়ে রইলেন সুশীল।

"কেন মুনাই তোমাকে এখনই ফোন করে বলেনি প্যাম্পার আনতে?"

"সেকথা তুমি কিকরে জানলে?"

"তোমাকে ফোন করার আগে আমাকে ফোন করে বলেছে তাই"

অসহ্য বিরক্তিতে কোনো কথা না বলে পাশ কাটিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে গেলেন সুশীল। কি অবস্থা! বাবাকে ফরমাইশ করে শান্তি নেই আবার মাকে ফোন করে নজরদারি চালাচ্ছে মেয়ে? উফ্ এদের জন্যই কি বেঁচে থাকতে হয়? এক এক সময় ইচ্ছে করে সবকিছু ছেড়েছুড়ে দিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে থাকতে। কিন্তু তার আগেও বোধহয় সংসারের যাবতীয় দায় সেরে তবেই ছুটি মিলবে।

ফ্যানটা চালিয়ে দিয়ে ইজিচেয়ারে শরীরটা এলিয়ে দিলেন সুশীল। চোখ দুটো বুজে মনটা শান্ত করার চেষ্টা করলেন।

"না রে আনেনি তো..আমি জিজ্ঞেস করলাম.. কিন্তু কিছুই বলল না.. আনলে তো বের করে দিত.. আচ্ছা আচ্ছা.. হ্যাঁ.. ঠিক আছে.. রাখছি.."

চোখ দুটো খুলে গেল কানে গিন্নীর কথা বলার আওয়াজ আসাতে। পরিষ্কার বুঝলেন সুশীল মেয়ে আবার মাকে ফোন করে যাচাই করে নিচ্ছে।

ভেতরে ভেতরে একটা অসহায়তা একটা বিপন্নতা গ্রাস করে আজকাল। সারা দুনিয়াকে চূড়ান্ত স্বার্থপর আর ধান্দাবাজ বলে মনে হয়। নিজেকে মনে হয় একটা বলদ। কাদার মধ্যে দিয়ে হাল টেনে নিয়ে যাচ্ছে আর পিঠে লাঠির বাড়ি পড়ছে।

(৪)

"দেখোনা এই শাড়িটা কেমন লাগছে..."

গিন্নীর ডাকে মুখ ফিরিয়ে দেখলেন সুশীল। মোবাইল স্ক্রিনে মডেলের গায়ে একটা ডিজাইনার শাড়ি পরানো। মুনাই ছবি পাঠিয়েছে ওর মাকে।

"ওসব আমাকে দেখিয়ে কি হবে? আমি ওগুলো বুঝিনা..."

"তুমি কোনকালেই বা বুঝলে? বিয়ে হয়ে এসে অব্দি আজ পর্যন্ত কটা ভালো শাড়ি কিনে দিয়েছো বলতে পারবে?"

"না পারব না। আমি যে বিরাট চাকরি করতাম না সেটা তোমার বাবা জেনেই তোমাকে বিয়ে দিয়েছিলেন আমার সাথে।"

"কি কথায় কি কথা! সব কথাতেই আমার বাপের বাড়ির পিন্ডি না চটকালে তোমার আজকাল শান্তি হয় না দেখছি। "

" আমাকে এসব দেখানোর দরকারটা কি বলতো? তোমরা মা মেয়েতে গিয়ে কিনতে পারো তো... "

" গিয়ে কেনার দিন আর নেই বুঝেছো? এখন অনলাইনে পাওয়া যায় সবকিছু। টাকাটা অ্যাকাউন্ট থেকে পে করে দিলেই হয়। "

" দিলেই যখন হয় তখন মেয়েকে বলো জামাইকে বলতে। সে তো এসবে এক্সপার্ট।"

" আরে ধুর! শোনো না... মুনাইকে রাজা দুদিন আগেই একটা কিনে দিয়েছে বারো হাজার দিয়ে। এই শাড়িটা মুনাই ও পরতে পারবে আবার আমিও পরতে পারব তাই বলছিলাম যে তুমি যদি একটু টাকাটা দিয়ে দিতে... "

চশমাটা খুলে স্ত্রীর দিকে একবার স্পষ্ট করে তাকালেন সুশীল সমাদ্দার। এই কি তার সেই অনুপমা যে বাইশ বছরেরটি হয়ে সলজ্জ সুশীলা বউ সেজে শ্বশুরবাড়িতে ঘর করতে এসেছিল? চৌত্রিশ বছরের দাম্পত্য জীবনে কত বদলে গেছে সেদিনের সেই তরুণী!

যৌথ পরিবারের মধ্যে থেকে কাটিয়ে দিয়েছেন অনেক গুলো বছর। তখন এই অনুপমাই একটু ভালো প্রিন্ট এর একটা ছাপা শাড়ি পরে তেল দিয়ে আঁচড়ানো লম্বা চুলের একটা বেণী করে, সামান্য পাউডার মুখে লাগিয়ে যখন একটা সিঁদুর এর টিপ লাগিয়ে কোনো কোনো রবিবারের সন্ধ্যা বেলা সুশীল এর সাথে একটু বেরোতেন ভিতরে ভিতরে একটা চাপা সুখ ছড়িয়ে পড়ত শরীরে মনে স্পষ্ট বুঝতে পারতেন সুশীল। আস্তে আস্তে মেয়ে জন্মালো। শরিকী বাড়ি ছেড়ে দুজনে মিলে মেয়েকে নিয়ে উঠে আসলেন এই বাড়িতে। একার সংসারে অনেক স্বাধীনতা। ইচ্ছে মত সংসার সাজালেন অনুপমা ।রাতের বিছানায় সুতির ছাপা শাড়ির বদলে জায়গা করে নিল সুতির ছাপা নাইটি।লম্বা চুলের বিনুনী অদৃশ্য হয়ে হালফ্যাশনের হেয়ার কাটে এলোকেশী হলেন সুশ্রী অনুপমা।

সরকারী দফতরের টাইপিস্ট এর চাকরী করেও অসাচ্ছন্দ্য বা অসুখ কোনোটাই তেমন ছিলনা। রোজকার গড়পড়তা জীবন বয়ে যাচ্ছিল নির্বিঘ্নেই।

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষ বদলায়। অনুপমা যে মনেও পাল্টাচ্ছেন ধীরে ধীরে তাও বোঝা যাচ্ছিল। তাঁর এতদিনের প্রাপ্তি অপ্রাপ্তিরা আস্তে আস্তে দেখা দিতে লাগলো। কোথায় যেন বোঝা যেত আরো অনেক ভালো চাকুরে ছেলের সাথে বিয়ে হলে অনুপমা সুখী হতেন। মেয়ে সুপর্ণা তাই কোনো রকমে বি এ টা পাস করতেই মা মেয়ে মিলে জুটিয়ে ফেললেন রাজাকে। প্রাইভেট ফার্মের মোটা মাইনের চাকরী করা হ্যান্ডসাম ছেলে। মুনাই এর লেখাপড়াতে মন না থাকলেও চেহারার মধ্যে জৌলুস ছিল।টানটান লম্বা, ফর্সা আর সুন্দর মুখশ্রী। তাই  চারহাত এক হতে সময় নেয়নি।

(৫)

রাত দুটো বেজে গেছে। ঘুম আসছেনা সুশীলের ।জানলা দিয়ে একটুখানি আকাশ দেখা যাচ্ছে। আধখানা চাঁদটা মাঝে মাঝেই ঢেকে যাচ্ছে ভেসে আসা মেঘে। কখনো কখনো মনে হচ্ছে আর বোধহয় মেঘের আস্তরণ সরবে না। গিন্নী ঘুমাচ্ছেন পাশ ফিরে। নিস্তব্ধ অন্ধকার ঘরে তাঁর নাক ডাকার আওয়াজটা কানে এসে লাগছে।

যতক্ষণ সুশীল রাজি হননি অনলাইন শপিং এর টাকাটা পে করতে অনুপমা একনাগাড়ে পুরোনো অপ্রাপ্তিগুলো তুলে মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত হার মানতে হল মা মেয়ের যৌথ আবদার এর কাছে। আজকাল অনুপমা মেয়ের দেখাদেখি লং কুর্তিতে নিজেকে সাজান। পার্লার থেকে চুলে কালার করিয়ে আসেন। মেয়েও যায় সাথে। নির্বিকার ভাবে রিটায়ার্ড বাবার কাছ থেকে কয়েক হাজার টাকা আদায় করে নেয়।তারপর কয়েক ঘণ্টা বাইরে কাটিয়ে দুজনে ফিরে আসে হাসিমুখে। আশ্চর্য ব্যাপার এই যে তখন অনুপমার হাঁটুর ব্যথা উধাও হয়ে যায়।

মেয়েকে একদিন বলেছিলেন সুশীল, "তোর মাকে একটু টাকা জমাতে শেখা মা। অনেক কিছুই তো শেখালি। এটা শেখালে একটু উপকার হবে আমার।"

হাসতে হাসতে মুনাই বলেছিল, "টাকা তো তোমার জামাই জমাচ্ছে বাবা। ও তো আর রিটায়ারমেন্ট এর পর পেনশন পাবে না। কিন্তু তুমি তো ঘরে বসেই পেনশন পাচ্ছো। যখন তুমি থাকবে না তখন মা পেনশন পাবে। তাছাড়া তোমাদের যা কিছু আছে সব তো আমারই তাইনা? "

হতবাক হয়ে মেয়েকে দেখেছিলেন সুশীল। কিছু বলার ছিল না। মনে হয়েছিল মেয়েকে যথার্থ শিক্ষা তিনি নিজেই দিতে পারেননি। বড় করে একটা নিঃশ্বাস বেরিয়ে এসেছিল বুকের ভেতর থেকে।

যে বছর চাকরী পান সুশীল পুজোতে মাকে কিনে দিয়েছিলেন একটা লালপেড়ে সাদা গরদ। অতি সাধারণ সেই শাড়িটা বুকে চেপে ধরে মা কেঁদে ফেলেছিলেন। তারপর চোখ মুছে আঁচলের খুঁট থেকে বের করে দিয়েছিলেন দুশোটি টাকা। বলেছিলেন, "তোর বাবার জন্য একটা ধুতি আর একটা জামা কিনে আনিস। এর বেশী আর জমাতে পারিনি। মায়ের সেই টাকাটা আজও খরচ করতে পারেননি সুশীল। নিজের টাকা দিয়েই বাবা আর অন্য দাদা দিদিদের জন্য কেনাকাটা করেছিলেন। সেই মা যখন আশি বছর বয়সে বিছানায় পড়লেন, তাকে দেখাশোনা করা নিয়ে ভাইবোনদের মধ্যে ঠেলাঠেলি লেগে গেছিলো প্রায়। মেজদাই শেষকালে মাকে নিজের কাছে রাখেন আমৃত্যু।

আজ এই শেষবেলায় এসে নিজের অদূর ভবিষ্যৎ কি দেখতে পাচ্ছেন সুশীল? এখনও পর্যন্ত হাঁটাচলা করতে পারছেন, সংসারের যাবতীয় চাহিদা মেটাতে পারছেন তাই, নইলে সত্যি কি তিনি সামান্য কিছু রিটার্ন পাবেন স্ত্রী কন্যার কাছ থেকে যাঁরা তাঁর টাকা ছাড়া আজ অন্য আর কোনোকিছুকেই ভালোবাসেনা? বড্ড একা লাগে। কপালে বড় একটা ভাঁজ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। চাঁদটা আবার ঢেকে যাচ্ছে মেঘে একটু একটু করে।




No comments:

Post a Comment