Monday, December 31

অণুগল্প : সুবীর ঘোষ









স্বখাতসলিলে



 বেশ ছিলাম । মাথায় একরাশ কাশফুলের বন নিয়ে । মৃদু হাওয়ায় ফুরফুর করে নাচত। কী কুক্ষণে গ্যাস খেয়ে গেলাম , তাও শালির কাছে । চুম্নি একদিন বলল--জাঁইবাবু , আপনি এত ইয়াংলুকিং । মাথায় কলপ করেন না কেন ? তা হলে তো কেউ আপনার বয়েস আন্দাজই করতে পারবে না ।  বয়েস আন্দাজ করতে পারলে কী ক্ষতি হয় তলিয়ে ভাবিনি । আমার শালি এতই বলশালী যে ওর কথায় নেচে  সেলুনে গিয়ে অমন কাশের গুচ্ছকে দিলাম কালিমালিপ্ত করে । সাদার এক রকম সৌন্দর্য ,  কালোর আর এক রকম । অদলবদল হয় না । যারা এতদিন সমীহ করত তারা এখন চ্যাংড়ামো করে । যাই হোক দিন চলছে । যারা মুখ ফুটে জিগ্যেস করে তাদের তবু বা কিছু যুক্তি দেওয়া যায় । কিন্তু যারা শুধু তাকিয়ে থাকে , কিছুই জিগ্যেস করে না তাদের মনের হাসির নাগাল পাওয়া দায় ।


 একদিন বাসে উঠেছি । কলেজ স্ট্রিট মোড় থেকে টালিগঞ্জ । অনেকটা রাস্তা । বরিষ্ঠ নাগরিকদের সিটের সামনে গিয়ে দাঁড়াই ।  অন্যদিন পটাপট অল্পবয়েসিরা ঊঠে দাঁড়ায় । আজ কেউ ঊঠল না। একজনকে মৃদুভাবে বললাম--ভাই সিটটা  ? সে বলল --এটা সিনিয়ার সিটিজেনদের জন্যে । আমি বলি-- আমি তো তাই । ছেলেটি আমার দিকে ঘুম ঘুম চোখে চেয়ে বলে--আপনি ! কী করে বুঝবো ? একজন পাকা মাথা সিনিয়ার সিটিজেন আগ বাড়িয়ে বলে ওঠেন--আজকাল  আমাদের এই সিটগুলোর দিকে দেখি অনেকেরই নজর । আসলে নিশ্চিন্তে বসা যায় তো ! আমি বলার চেষ্টা করি --না না আমি সত্যিই সিনিয়ার সিটিজেন । তিন বছর হল  রিটায়ার করেছি । প্রথম ছেলেটা এবার বলে -- তা হলে তো আপনার আই কার্ডটা দেখতে হয় । আর এক বুড়ো বলে ওঠেন-- এভাবে অন্যের আই কার্ড তুমি দেখতে চাইতে পার না । সেটা কন্ডাকটার পারে , তাকে ডাক । কন্ডাকটার এলেন।-- দেখি আপনার আই কার্ড  । আমি শশব্যস্ত । আই কার্ড তো সঙ্গে নেই । ছোকরাটা এবার বলে --তা হলে তো চিত্তির  । থাকুন দাঁড়িয়ে । ইতিমধ্যে এক বৃদ্ধ অতি কষ্টে বাসে উঠে এলেন । তাঁর যে হাঁটুর ব্যথা না বলে দিলেও  সেটা বোঝা যায় । তর্ককরা ছোকরাটি উঠে দাঁড়াল এবং একটু পরে নেমেও গেল ।


 আমি সারা রাস্তা দাঁড়িয়ে থেকে অবশেষে এক সময় টালিগঞ্জে নামলাম । হাঁটুতে যে একটু ব্যথা হচ্ছিল না তা নয় তবে গায়ে আমার পুলক লাগছিল । নীললোহিত মনে হল নিজেকে । আরে এই তো বেশ । সাতাশের বেশি বয়েস বাড়ে না । তেষট্টি পেরোনো মানুষকে সবাই অফিসের নিত্যযাত্রী ভাবছে এই বা মন্দ কী !

2 comments: