Monday, December 31

গল্প : ধরিত্রী গোস্বামী

                       


  এই বালুকাবেলায়
                           

যেদিন আমার একমাত্র সন্তান, আমার মেয়ে বিজু প্রথম ঋতুমতী হল, সেই দিনটা সাংঘাতিক চ্যালেঞ্জিং দিন ছিল আমার এযাবৎ বাহান্ন বছর বয়সের জীবনে। এমন কি পরমার মৃত্যতেও মনে হয় আমাকে এতবড় বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয়নি। কেননা আমি যে বিজুর মা নই, আমি যে ওর বাবা। একজন বিপত্নীক বাবা। আট বছরের মেয়েকে আমার জিম্মায় ফেলে রেখে নির্বিকার চিত্তে পরমা চলে গিয়েছিল কার্তিক মাসের এক উজ্জ্বল সকালে। সে আজ থেকে বারো বছর আগেকার কথা।   
লোকমুখে শুনেছি সেই অভিশপ্ত সকালটিতে পরমা খুব স্পিডে মোপেড চালিয়ে কলেজ যাচ্ছিল। সেদিন প্রথম পিরিয়ডেই ক্লাস ছিল ওর। খানিক আগেই বেশ রাগারাগি করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। ওর অভিযোগ ছিল আমার প্রতি। আমি কেন সাতসকালে সংসারের কাজে হাত না লাগিয়ে, ওকে সময়ে বেরুতে সাহায্য না করে নিউজপেপার আর সিগারেট নিয়ে বসেছিলাম অনেকক্ষণ? আসলে আমি যে কয়েকদিন যাবত ভেতরে ভেতরে একটা জটিল প্রবলেম নিয়ে চিন্তা করে যাচ্ছিলাম সেটা ও  বুঝতে পারেনি। কোনদিনই পারেনি। ফাইনানশিং এর কাজ আমার, কোম্পানির নানা রকমের ডেড লাইনের চাপ থাকেই সারা বছর।  পরমার বরাবর একটাই মূল অভিযোগ ছিল যে আমি একেবারেই সংসারে মনোযোগী নই। বারে বারে বুঝিয়েছি ওকে। চাকরি ছেড়ে দিতে বলেছি। আমার যা আয় তাতে আমাদের একটি সন্তান নিয়ে হেসে খেলে চলে যাবার কথা। কিন্তু কিছুতেই রাজি হয়নি। নিজের স্বাধীন জীবন, কেরিয়ার, নিজস্ব জগত এসব কিছুতেই ছাড়তে রাজি ছিল না পরমা। জীবনীশক্তিতে ভরপুর নারী, কোন কিছুতেই দমবার পাত্রী ছিল না কোনদিন। নিজের শর্তে বাঁচতে চেয়েছিল বরাবর, কিন্তু আমি ওকে সেই সুযোগ করে দিতে পারিনি। দশ বছরের দাম্পত্যের প্রথম দিকটা বেশ উপভোগ করেছিলাম আমরা। আমাদের সম্বন্ধের বিয়ে হলেও দুইটি পরিবার বেশ  মানানসই হয়েছিল। নিজে ভাল চাকরি হাতে নিয়ে তবেই বিয়েতে মত দিয়েছিলুম। পরমাও তখন সদ্য মাস্টার্স শেষ করে পিএইচডিতে ঢুকেছে। বিয়ের পরে সিকিম, মালদ্বীপ করতে করতেই বিজু এসে গেল দুজনার জীবনে। আমাদের একমাত্র মেয়ে বৈজয়ন্তী।
একদিকে পিএইচডির চাপ, অন্যদিকে কচি বাচ্চার হাজারটা চাহিদা। মেয়ে হবার মাস ছয়েকের মধ্যেই সে সব মেটাতে গিয়ে একেবারে নাচার হয়ে পড়ল পরমা। যথেষ্ট পয়সা দিলেও পছন্দসই কাজের লোক পাওয়া চিরকালের মুশকিল। পরমা বেশির  ভাগ কাজ নিজেই করে নিত। একটিই যা ঠিকে কাজের মাসি ছিল। সংসারে দ্বিতীয় কোন মহিলা ছিল না দায়িত্ব ভাগাভাগি করে  নেবার  জন্য। আমি নিজে সেই কোন কৈশোরে মাকে হারিয়েছি। পরমার মাও ছিলেন ডায়াবেটিসের রুগি, অসুস্থ মানুষ। এদিকে আমার তখন চাকরিতে চড়চড় করে উন্নতি হচ্ছে। একটি বিশেষ প্রবলেম সমাধান করে দিতে পারলেই আমার সামনে প্রমোশন। বিদেশ যাত্রা। আমিই বা কিভাবে তখন সব ছেড়ে ন্যাতা কাঁথা দুধের বাটি নিয়ে দিন কাটাই? ফলে সমস্ত চাপটা গিয়ে পড়ল পরমার ঘাড়ে। সন্তানের মা হিসেবে সেসব দায়িত্ব এড়াতেও পারল না কিন্তু শরীর আর মনের ওপরে স্ট্রেস পড়চ্ছিল প্রচন্ড। মেয়ে বড় হচ্ছিল আর পরমা ফুরিয়ে যাচ্ছিল। আমিও কিছুতেই নিজেকে ফ্রি করতে পারিনি। একটার পর একটা প্রজেক্ট আমাকে সংসারের দায় দায়িত্ব থেকে অনেক দূর ছিনিয়ে নিচ্ছিল প্রতিনিয়ত। তার মধ্যেই এই ঘটনা। ডাম্পারটা যমদূতের মত এসে ধাক্কা মেরেছিল মোপেডে। ব্যস, মুহূর্তে সব শেষ। থেমে গিয়েছিল পরমার রোড রেস।
স্বাভাবিক ভাবেই পরমার বাবা মা খবরটা পেয়ে ছুটে এসেছিলেন। একে অসুস্থ তায় বয়স হয়েছে, দুজনেই সাংঘাতিক ভেঙে পড়েছিলেন। আমাকে ত অপিস থেকে লম্বা ছুটি নিতে হল।  শোকস্তব্ধ পরিবেশে পারলৌকিক কাজ মিটল। বিজু থেকে থেকে মামনি মামনি করে অবুঝপনা করলেও, দাদু দিদাকে কাছে পেয়ে মোটামুটি শান্তই ছিল। পরমার বাবা মা ছাড়া আরও কিছু আত্মীয় পরিজন এসেছিলেন। মা-হারা শিশুর জন্য অনেক আহাউহু ভেসে বেড়াতে লাগল ঘরের চার দেয়ালের ভেতরে। কাজকর্ম মিটতেই একে একে তাদের বিদায়ের পালা শুরু হোল। মেয়েটার কি হবে ভেবে কেউ দুদিন মেয়াদ বাড়িয়ে থেকে গেল না। আমার খুব বাধা দিতে ইচ্ছে করলেও উপায় ছিল না। প্রত্যেকেরই নিজস্ব সংসার আছে, দায়-দায়িত্ব আছে। সব শেষে চলে গেলেন পরমার বাবা  মাও। ওদের হয়ত থাকলেও চলত কিন্তু মেয়ের অকাল মৃত্যুতে দুজনাই এতটা ভেঙে পড়েছিলেন যে আমি আর সেই দাবি করতে পারিনি। শ্বশুরমশাই অবশ্য জানতে চেয়েছিলেন, কিভাবে সব সামলাবে তুমি অঙ্কুর? মেয়েটাকে দেখবে কে? আমি শুধু আশ্বস্থ করেছিলাম। উত্তরটা আমারও জানা ছিল না। বাড়ি ফাঁকা হতেই বিজু চোখ ছলছল করে আমার সামনে এসে দাঁড়াল, “মরে যাওয়া মানে কি রকম বাপি? মামনি আর বাড়ি ফিরবেই না?” মায়ের শবযাত্রা ওকে দেখতে দেওয়া হয়নি। পরমার ক্ষতবিক্ষত দেহটাকে মালায় ফুলে ঢেকে হাসপাতাল থেকেই শ্মশানে পাঠান হয়েছিল। বিজু তাই এখন অব্দি জানত ওর মা হাসপাতালেই আছে। তারপর বাড়িতে লোকজন, পুজাপাঠ, কান্নাকাটি, সব এই কদিন দেখে গেছে চুপচাপ কিন্তু আয়ত্ব করতে পারেনি কিছুই। এখন চোখ ভরা  প্রশ্ন নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়াল। ধক্ করে উঠল বুকের ভিতরটা, এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে আন্দাজ ছিল, ঠিক ধারণাটা ছিল না। আট বছরের রোগা পাতলা মেয়েটাকে কোলে তুলে উঠে গেলাম ছাদে। তারপর যুগে যুগে সব্বাই যা করেছে, আমিও তাই করলাম। আকাশের দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে বললাম মেয়েকে, মা ওইখানে চলে গেছেন বিজু, দেখ ওই জ্বলজ্বলে তারাটা হল মা।  তোমায় দেখে হাসছেন। সঙ্গে সঙ্গে সাঁড়াশির মত আক্রমণ, মা আমাকে ফেলে চলে গেল কেন? আমি পরীক্ষায় সেকেন্ড হয়েছি বলে? মা আমাকে ফার্স্ট হতে বলেছিল। হাপুস নয়নে কাঁদছে মেয়ে। পরমার মৃত্যুর আকস্মিকতায় আমি এতটাই বিমূঢ় হয়ে পড়েছিলাম যে একবারও কাঁদতে পারিনি। সেদিন, ওই ছায়াছন্ন সন্ধ্যার আকাশের নিচে ছাদের ওপরে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে প্রথম কেঁদে উঠলাম হুহু করে, না রে পাগলি, মা আসলে আমার ওপরে রাগ দেখিয়ে চলে গেছেন। একদম ওঁর কথা শুনতাম না যে!
তারপর শুরু হল প্রত্যেকটা দিনের লড়াই। সত্যি বলতে কি, পরমার রান্নাঘরে চিনির শিশিটা কোথায় থাকত সেটুকুও খোঁজ রাখিনি কোনদিন। প্রথম যেদিন মেয়েকে সকালে স্কুল পাঠাতে গেলাম, ভয়ানক নাজেহাল লাগল নিজেকে। কোথায় দুধ, কোথায় চিনি, কোথায় জ্যাম, কি টিফিন দিতে হয় বাচ্চাকে, কিভাবে বানায়—মনে হচ্ছিল এক ভয়ংকর গোলকধাঁধাঁয় পাক খাচ্ছি, কিছুতেই বেরুবার পথ খুঁজে পাচ্ছি না। প্যাকেটের পিছনের লেখা পড়ে পড়ে ম্যাগি বানিয়ে দিলুম, বুঝতে পারলুম ব্যাপারটা বেশি গলে গেল। কিচ্ছু করার নেই তখন, বাসের সময় হয়ে যাচ্ছে। ড্রেস পরাতে হবে, জুতো মোজা, অনেক কিছু বাকি। কোনমতে মেয়েকে তৈরি করিয়ে কোলে নিয়ে ছুটলাম রাস্তার মোড়ে। পরমা কখন কিভাবে এসব করত, কোনদিন খেয়াল করে দেখিনি। আমি যতক্ষনে ঘুম থেকে উঠতাম, বিজু স্কুলে বেরিয়ে গেছে। মেয়ে নিয়ে আমাকে ছুটতে দেখে অনেক সহানুভূতির দৃষ্টি ঘুরে গেল আমার দিকে, আমার গায়ে সেগুলো এসে তীরের মত বিঁধল। বাসটাও মনে হল দয়া করেই একটু বেশি সময় নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি মিঃ অঙ্কুর চ্যাটার্জি, চিফ ফাইনান্স ম্যানেজার, ফিউচার মাইকোটেক ইন্ডিয়া লিমিটেড, একটা বোকা বোকা মুখ করে অপস্রিয়মাণ বাসটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আশেপাশের গুনগুন আলোচনার মাঝখান দিয়ে ধিরে ধিরে বাড়ি ফিরে এলাম। এসেই আবিষ্কার করলাম, মেয়ের ব্যাগে টিফিনটা ঢোকাতেই ভুলে গেছি। টেবিলের ওপরে একটা হতাশ চাপড় মেরে ফাঁকা ঘরে হুহু শব্দে আর একবার কেঁদে উঠলাম আমি। সেদিন আমারও অপিস জয়েন করার কথা। সারাদিন আর মুখে কিছু দিতে পারলাম না। দুপুরে লাঞ্চ আওয়ারে বেরিয়ে ৮০-৯০ কিলোমিটার স্পীডে চালিয়ে যখন মেয়েকে আনতে যাচ্ছি মনে পড়ে গেল পরমার কথা। পা উঠে এল এক্সিলেটর থেকে। পরমা হঠকারিতা করে চলে গেল, আমি সাবধান না হলে মেয়ে যে জলে পড়বে।
সেদিন মেয়েকে নিয়ে ফেরার পথে আবার আরেকটা ধাক্কা। আষাঢ়ের আকাশের মত কালো মুখে গাড়িতে উঠে বসল মেয়ে। আমি ভাবলুম, টিফিনটা ভুলে দেওয়া হয়নি, হয়ত খিদেতে রাগ করেছে। সরি বলাতে, মুখটা অন্যদকে ঘুরিয়ে নিল। আমি গাড়ি নিয়ে দাঁড় করালাম ওর খুব প্রিয় একটা চিনা রেস্তোরাঁর সামনে। বাড়িতে কিছু রান্না হয়নি, লাঞ্চ এখানেই সারতে হবে। মেয়েকে অনেক সাধ্যসাধনা করেও গাড়ি থেকে নামাতে পারলাম না। এদিকে সকাল থেকে খালি পেটে থাকার ফলে তখন আমার গা গুলাচ্ছে। বিজু যখন কিছুতেই কথা শুনছে না, জেদ দেখাচ্ছে ভয়ানক, তখন রাগের মাথায় কষিয়ে দিলাম এক চড়। মুহূর্তে কান্না থামিয়ে অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে চেয়ে রইল মেয়ে। বোবা জানোয়ারের মত গাড়ি চালিয়ে চলে এলাম বাড়ি। অপিসে ফোন করে জানিয়ে দিলাম, যেতে পারব না। মিটিং ছিল একটা জরুরি, সেটা বাতিল করাতে হল।
বাড়ি ফিরে নিজেই বাথরুমে ঢুকে জামা পালটে মুখ হাত ধুয়ে নিজের জায়গায় গিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল বিজু। আমি আর ভয়ে খাবার কথা জিজ্ঞেস করতে পারিনি। নিজে চাট্টি মুড়ি চিনি ভিজিয়ে খেলুম। নিজের ওপরে ভয়ংকর লজ্জা আর ঘেন্না দুই-ই হচ্ছিল। আবার কিছুটা করুণাও। আমার ভেতরে ভেতরে কি ঝড় চলছে সেটা অনুভব করার মত কেই বা ছিল পাশে? ঘরে গিয়ে দেখি মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। খুব ইচ্ছে হচ্ছিল ওকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে থাকি কিন্তু তা না করে অন্য ঘরে ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম। অপিসে মিটিং চলছে। আমার আজ হাজির থাকাটা খুব জরুরি ছিল। অনেক টাকার একটা প্রজেক্ট হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে। ভিডিও কানেক্ট করার চেষ্টা করলুম। হয়েও গেল। অপিসে না গিয়েও ঘরে বসেই আমি মিটিঙয়ে হাজির হয়ে গেলাম। ভেতরে ভেতরে যে টেনশন তৈরি হচ্ছিল এতক্ষণ সেটা কিছুটা কমে গেল।
নিজের কাজে ডুবে গেছিলাম। হঠাৎ একটা চিৎকারে চমক ভাঙল। ছুট্টে রান্নাঘরে গিয়ে দেখি বিজু ভ্যাবাচেকা মুখ করে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। ডান হাতের আঙুল ছ্যাঁকা লেগে ঝলসে গেছে কিছুটা। আভেনের ওপরে সসপ্যানে জল ফুটছে। আমি ওকে কোলে  তুলে নিলাম। কি করতে যাচ্ছিলে বিজলি রানি? জানতে চাই। তোমার জন্য চা করছিলুম বাপি, হাতের জ্বালা ভুলে, দুপুরের রাগ ভুলে এক গাল টোল ফেলা হাসি। আমার চোখে আবার জল আসার পালা। আবার হেসে ওঠার পালাও। ততক্ষণে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে বিজু। এমনকি আমার সঙ্গে বসে চা দিয়ে কেক অব্দি খেল। কথায় কথায় জানতে পারলাম দুপুরের মন খারাপের কারণ। স্কুলের বন্ধুরা অনেকেই ওর মায়ের মৃত্যুর ব্যাপারে কৌতূহল দেখিয়েছে, প্রশ্ন করেছে। শেষ পর্যন্ত এক টিচারের হস্তক্ষেপে ব্যাপারটা থামলেও বিজুর মনে অনেকটাই ঘা করে দিয়েছে। শুনে খুব অপরাধী লাগতে লাগল নিজেকে। আমার খেয়াল করা উচিত ছিল, মেয়েকে স্কুলে পাঠাবার আগে আর একটু মানসিক দিক থেকে তৈরি করে পাঠালে এই সমাজের নিষ্ঠুর দাঁত নখগুলো ওর নরম মনটাকে এভাবে ফালাফালা করতে কাটতে পারত না। 
আমি কোনদিনই খুব মিশুকে ছিলাম না। পরমার আলাপ পরিচয়ের পরিধি ছিল অনেক ব্যাপক। আমি আমাদের আবাসনের বেশি কাউকে চিনতাম না। ওই ঢুকতে বেরুতে দু-একজনের চেনা মুখ। তাদের মধ্যেই একজন মিঃ প্রতীক সেন।  চার্টার্ড এ্যাকাউনটান্ট ভদ্রলোক কিছুদিন আগে রিটায়ার করেছেন। তখন একটা পার্টি দিয়েছিলেন, আলাপ হয়েছিল। ওনার স্ত্রী, বয়সে পরমার থেকে অনেকটাই বড় হলেও দুজনার ভাল আলাপ ছিল। ফলে কিছুটা কিন্তু কিন্তু করে ওঁদের কাছেই প্রথমে গেলাম আমি। সমস্যার কথা বললাম, একজন ভাল রান্নার লোক লাগবে বললাম। পরমা নিজেই রান্না করত, মেয়েকে কাজের লোকের হাতের রান্না খাওয়াতে চাইত না। কিন্তু এখন যে দুবেলা দুটি ভাত ঝোল জোটাই আমাদের কাছে মস্ত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাজ  হল সঙ্গে সঙ্গে, মিসেস সেন নিজের রান্নার মেয়েটিকেই ঠিক করে দিলেন। সকালে আগে আমার বাড়ি আসবে, বিজুর স্কুলের টিফিন করে দেবে, আমার জলখাবার। তারপর বাকি দিনের রান্না করে ফ্রিজে রেখে যাবে। আমি যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। মিঃ সেন আরেকটি অফার দিলেন। অঙ্কুর, আপনার এখন কি অবস্থা বুঝতে পারছি। যদি মেয়েকে রাখার সমস্যা হয় কখনো তাহলে খোলাখুলি বলবেন, আমাদের কাছে কিছুটা সময় ও কাটালে আমাদেরও ভাল লাগবে। আমি তখন কৃতজ্ঞতায় প্রায় মাটিতে মিশে যেতে চাইছি।
কাগজে বিজ্ঞাপন দিলাম। সব সময় ঘরে থাকতে পারবে এমন একজন বয়স্কা মহিলা চাই। অনেকেই যোগাযোগ  করলেন, কিন্তু আমার কাউকে পছন্দ হচ্ছিল না। কোন না কোন একটা জায়গায় এসে আটকে যাচ্ছিল। আসলে পরমার পছন্দ, রুচি, বিশ্লেষণ যেন কোন আড়াল থেকে আমাকে নির্দেশ দিচ্ছিল। নিজস্ব মতামত বিবেচনা ভুলে আমি সব সময় খেয়াল করবার চেষ্টা করছিলুম এই পরিস্থিতিতে পরমা হলে ঠিক কি করত। কোনদিনই আমি সংসারের নৈমিত্তিক ঘটনাগুলোকে গুরুত্ব দিতাম না, খোঁজও রাখতাম না। এই সব ব্যাপারে আমি ছিলাম পুরোপুরি পরমার ওপর নির্ভরশীল। এখন কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমার মনে লাগল আমি একটা অতলস্পর্শ গভীর খাদের ধারে দাঁড়িয়ে আছি। খুব অসহায় লাগতে লাগল নিজেকে, ঘন ঘন ধৈর্য্য হারাতে লাগলাম, যেটা কখনও হয়নি, সেই অপিসের কাজেও অমনোযোগী অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম। একটাই স্বান্তনা, মিসেস সেনের পাঠান কাজের মেয়েটির দয়ায় দুবেলা খাওয়াটা আমাদের জুটে যাচ্ছিল। ঘরের কাজ করতেন যে মহিলা, যাকে নিরুদি বলে ডাকতে শুনতাম পরমাকে, সেই মহিলাই এখন দায়িত্ব সহকারে আমাদের ছেড়ে রাখা কাপড়চোপড় ধুয়ে দিতেন, বিজুর স্কুলের মোজা পর্যন্ত। বিছানার চাদর পালটে দিতেন, নিজেই মাসে একবার করে সমস্ত পর্দা খুলে কেচে আবার টাঙিয়ে দিতেন, ছুটির দিনে বাড়তি সময় নিয়ে ডাস্টিং করতেন, রান্নাঘর গুছাতেন। নিজে থেকে মুখে কিছু না বললেও আমি ওনার মাইনেটা অনেকটাই বাড়িয়ে দিলাম। আর যাই হোক স্রেফ ওনার জন্যই আমাদের ফ্ল্যাটটা আবার বাসযোগ্য মনে হতে লাগল। এমনকি ব্যালকনিতে সারি দিয়ে রাখা পাতাবাহারগুলো পর্যন্ত রোজ জল পেয়ে নতুন পাতা ছাড়তে শুরু করল আবার। আর সেটা লক্ষ্য করে আমার চোখে আরেকবার জল  এল। কারু জন্য কিছু থেমে থাকে না, এই নির্মম সতি্যটা একবার ঘা মারল বুকে।
পরমা চলে যাবার কিছু দিনের মধ্যেই এসে পড়ল বিজুর অষ্টম জন্মদিন। হয়ত এখানেও আমি আবার একটা কেলেঙ্কারি কান্ড ঘটাতাম, কেননা মেয়ের বা পরমার বা নিজের জন্মদিন কোনটাই কোনদিনও মনে রাখিনি আমি। এসব আমার সাংঘাতিক বাহুল্য মনে হত কেবল। পরমাই সব আয়োজন করত, আমি শুধু টাকা দিয়ে আর সেই দিন সন্ধ্যায় বাড়িতে হাজিরা দিয়ে বা বিজুর  বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করে সবাইকে বাধিত করতাম। এবারে আমাকে বাঁচিয়ে দিলেন শ্বশুর-শাশুড়ি দুজনে। নাতনির জন্মদিনের আগের সন্ধ্যায় অনেক খেলনা, নতুন জামা, কেক, সব নিয়ে তারা এসে পড়লেন। গুমোট বাড়িটাতে সাময়িক হলেও এক ঝলক মুক্ত বাতাসের আনাগোনা টের পাওয়া গেল। মেয়ে নিজেই ফোন করে বন্ধুদের ডাকল। নাচ গানের আবহে যখন বাচ্চারা মেতে উঠেছে, তখন বেডরুমে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে আঁচলে চোখ মুছছেন পরমার মা, মাথা নিচু করে বসে আছি শ্বশুরমশাই আর আমি। আর গলায় মালা ঝুলিয়ে দেয়ালে হাসছে পরমা। হঠাৎ, খুউব রাগ হল আমার, খুউব। কি মানে হল এভাবে সব কিছু তছনছ করে দেবার মুহূর্তের অসতর্কতায়? দেয়ালের দিকে তাকিয়ে মনে হল পরমাও বলে উঠল, তোমারই বা কি ক্ষতি হত বল যদি পারিপার্শ্বিকের প্রতি আর একটু মনোযোগী, আর একটু যত্নশীল হতে। তাহলে আজকের এই দিন হয়ত দেখতে হত না। সম্বিৎ ফিরতে খেয়াল হল, বাচ্চাগুলোকে একে একে বাড়ি পোঁছে দিয়ে আসতে হবে এবার।
এইভাবে দেখতে দেখতে পরমার মৃত্যুর বছর ঘুরে গেল। এই এক বছরে বিশেষ বিশেষ যে ঘটনাগুলি ঘটল তার  সারাংশ এইরকম, মেয়ের শোকে অসুস্থ শাশুড়ির মৃত্যু, ভগ্নহৃদয় শ্বশুরমশাই সংসার ছেড়ে আশ্রমবাসী, চোখের সামনে এইসব পরিদৃশ্যের প্রতিঘাতে বিজুর মানসিক বয়স ঝপ্ করে অনেকটাই বেড়ে যাওয়া, আর প্রতিটা দিন ভারসাম্যের খেলা খেলতে খেলতে আমার নিজস্ব জীবনবোধের আমূল পরিবর্তন। এখন আর আমার সামনের প্রধান চাঁদমারি অপিসের প্রমোশন নয়, বিদেশি প্রজেক্ট আনা নয়, এমনকি বিশেষ কোন লক্ষ্যপূরণের সাফল্যে বসের তারিফ অব্দি নয়। এখন আমার অভীষ্ট লক্ষ্য আমার মেয়ের মুখের হাসি, তার সুস্থতা, তার পড়াশুনা, তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। আমার সামনে যে সম্ভাবনাময় ক্যরিয়ার জ্বলজ্বল করত পরমার মৃত্যুর  আগের দিন পর্যন্ত, তার মোহ নির্মম ভাবে ত্যাগ করে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে চাকরি নিলাম। এটাও উঁচু পদ, কাজেরও চাপ আছে,  তবু কিছুটা যেন স্বচ্ছন্দে থাকতে পারা যাচ্ছিল, মেয়ের প্রয়োজনে সময় দিতে পারছিলাম। বাড়ির কাজ এবং রান্নার দিকটা মাইনে করা লোকেরা সামাল দিলেও, আমি নিজেই এখন যথেষ্ট সাবলীল এবং আত্মবিশ্বাসী। এবং সব থেকে বড় কথা হল বিজু। সে নিজেই স্কুলের জন্য তৈরি হয়ে নেয়, নিজেই পড়া করে, নিজেই স্কুলের প্রজেক্ট করে, দুপুরে স্কুল থেকে ফিরে নিজেই তালা খুলে ঘরে ঢোকে, নিজেই মাইক্রোওয়েভে খাবার গরম করে খেয়ে, বিশ্রাম নেয়। তারপর বিকেলে আমি ফিরে এলে দুজনে সাইকেলে করে ঘুরি বা ব্যাডমিন্টন খেলি, বৃষ্টি পড়লে ঘরে বসে ক্যারাম। বিজুর চোখের দৃষ্টি এখন অনেক গভীর আর শান্ত, আর এখন ও মাঝেমাঝে আবার ঘর জুড়ে হেসে ওঠে আগের মত। আমার চোখে আর কথায় কথায় জল আসে না, কিন্তু যে কোন সমস্যার সামনে এসে পড়লেই আগে চিন্তা করি পরমা হলে ঠিক কি করত সেই ক্ষেত্রে। আড়াল থেকে পরমা আমাকে নির্দেশ দেয়, সাহায্য করে। আর প্রতিটি গভীর রাতে, বিজু বালিশ জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লে পরমা এসে বসে আমাদের জানালার কার্নিশে, লতিয়ে ওঠা খুব শখের জুঁই গাছটার ছায়ায়। আমায় জাগিয়ে রাখে অনেকক্ষণ।
এইভাবে চক্রাকারে আরও তিনটি বছর কেটে গেছে কিসের যেন ঘোরে। তার মধ্যে শূন্যতা আর শোক যতটা, নতুন আবিষ্কার আর আনন্দও ততটা। সত্যি বলতে কি, বিজুই প্রথম মানবী যাকে আমি খুব কাছের করে পেয়েছি। মাকে হারিয়েছিলাম কৈশোরে, জেঠিমার কাছে মানুষ। তিনি ভালবাসতেন নিঃসন্দেহে কিন্তু মস্ত সংসারে এমন জড়িয়ে থাকতেন যে কাছে পাওয়া যেত না। জেঠিমার দুই ছেলে, আমারও নিজের কোন বোন ছিল না। বিয়ের পরে পরমাকে নিয়ে মেতে ছিলুম কয়েক বছর, সেখানে মনের থেকেও আকর্ষণ বেশি ছিল শরীরে। তারপর শরীরের টান কমতে না কমতেই আমাকে পেয়ে বসল কাজের নেশা, উন্নতির স্বপ্ন। প্রেমিকা থেকে স্ত্রী এবং মায়ের ভূমিকায় পরমার রূপান্তর তেমন করে নজরে এল না। এইবারে আমার সময় এল বিজুর প্রতিটা দিনের নতুন নতুন রূপ, নতুন নতুন ভাবনাকে চেনবার, বোঝবার। এ এক অপূর্ব উদঘাটন।
কিন্তু মেয়ে যেদিন ভোরে কাঁদতে কাঁদতে এল আমার কাছে, দুই পা বেয়ে নেমেছে রুধির ধারা, সেদিন মুহূর্তের জন্য আমি অসম্ভব অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। আমার খেয়ালই ছিল না কবে মেয়ের বয়স প্রায় এগারো পেরিয়েছে, তাহলে হয়ত কোনভাবে কাউকে দিয়ে ওকে প্রস্তুত করে রাখার কথা ভাবা যেত। যাইহোক সেদিন প্রথমে ওকে আশ্বস্ত করতে হল, পরমা হলেও তাই করত নিশ্চয়। আরে আরে বিজলি রানি, এটা কিচ্ছুই নয়, এটা হতেই পারে, মানে সবার হয় আর কি। চল চল, তোমাকে  পরিষ্কার করিয়ে দি। বাথরুমে মেয়েকে পরিষ্কার করাতে গিয়ে প্রথম শুনতে পেলাম ওর দেহে নারীত্বের কোমল পদধ্বনি। আমার চৈতন্য হল, বুঝতে পারলাম দায়িত্ব আরও কতগুণ বেড়ে গেল আমার। মেয়েকে আরও কত রক্ষা করে চলতে হবে, আরও কত সময় দিতে হবে। এইসব ভাবতে ভাবতে পরমার আলমারিটা যেন কত যুগ পরে খুললাম। অনেক তোলপাড় করে আধ-প্যাকেট স্যানেটেরি ন্যাপকিন খুঁজে পাওয়া গেল। কিন্তু ব্যবহার কিভাবে সে ত জানি না। বোকার মত দাঁড়িয়ে কি করা যায় ভাবছি এমন সময় ঈশ্বরের করুণা, ডোরবেল বেজে উঠল। প্রতিমা, মানে রান্নার মেয়ে এসে গেছে। ন্যাপকিনের প্যাকেট হাতে আমাকে দরজা খুলতে দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল মেয়েটার, নিতান্ত এতদিন ধরে আমাকে দেখছে বলে ঘাবড়ে গেল না। আমি ইশারায় বিজুর ঘরের দিকে দেখালাম। হাতে প্যাকেটটা ধরিয়ে শুকনো গলায় বলতে হল, ওর এটা প্রথমবার। তুমি একটু বুঝিয়ে দাও না। আর হ্যাঁ, বেশি কিছু এখুনি বল না। স্কুলে বেরুতে হবে না আজ। বাড়িতেই থাকুক।
এত বড় দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়নি হালফিলে। সিগারেট হাতে বাজারে গেলুম। দোকান থেকে ন্যাপকিনের বড় বড় প্যাকেট নিলাম দুটো। তারপরেই মনে পড়ল আমার এক বন্ধুর স্ত্রীর কথা। ভদ্রমহিলা এখানকার সদর হাসপাতালের গাইনোকলজিস্ট। পরমাকেও ভালই চিনতেন, আড্ডা, বেড়ানো সবই হত ওদের মধ্যে। ও মারা যাবার পর থেকে আমার দোষেই যোগাযোগ কমে গেছিল। সেদিন সকালেই সব কাজ ফেলে ছুটলাম ওদের বাড়ি। জানালাম আমার সমস্যার কথা। অরুনিমা, আমার বন্ধু-পত্নী ভরসা  দিলেন। সেদিন সন্ধ্যায় ওরা সস্ত্রীক এলেন আমাদের বাড়ি। বিজুর সঙ্গে গল্প করতে করতে একসময় ওকে নিয়ে ভিতরে চলে গেলেন অরুনিমা। বুঝলাম, আমার সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছেন তিনি। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস বেরিয়ে এল বুকের ভিতর থেকে।
এরপরের বছরগুলো কিভাবে জানি না আরও দ্রুত কেটে গেল। এই সময়টা আমাকে খুব সাহায়্য করল একজন খুব নগণ্য মানুষ, সে আমার রান্নার মেয়ে প্রতিমা। সেই দিন সকালেই ও আমার মুখের অসহায়তাটা পড়তে পেরেছিল ভালভাবে। এর পর থেকে লক্ষ্য করলাম আমার সংসারের সঙ্গে, বিশেষ করে বিজুর সঙ্গে নিজেকে অনেক বেশি জড়িয়ে নিল ও। বিজু তার নানান  সমস্যার কথা ওকেই জানাত। প্রতিমা নিজেই সামাল দিত সেই সব, খুব প্রয়োজন হলে আমাকে জানাত। আমি ওর মাইনেটা অনেকটাই বাড়িয়ে দিলাম, কিন্তু তাই দিয়ে কি আর সব মূল্য চোকানো যায়? প্রতিমা ছাড়াও অরুনিমা, মিসেস সেন, এঁরাও সময় অসময়ে বিজুর বয়ঃসন্ধির দিনগুলিতে মায়ের অভাবটা অনেকটাই সামাল দিয়েছিলেন। না হলে আমি যে কোথায় তলিয়ে যেতাম জানি না।
আজ, পরমার মৃত্যুর চোদ্দ বছর পরে যখন আমি বসে বসে এইসব দিনগুলি মনে করছি, নিজেরই কেমন অবিশ্বাস্য লাগছে। আমিই পারলাম এতসব করতে? সাত বছরের একটা মেয়েকে আজ একুশের করে ফেললাম প্রায় একা একাই? নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ইন্টারন্যাশানাল এয়ারপোর্টের বাইরে বসে আছি, কনকনে ডিসেম্বরের রাত। খানিক দূরে বিজু ওর আরেক বান্ধবীর সঙ্গে গরম ক্যাপুচিনো কফিতে চুমুক দিতে দিতে গল্প করছে। উজ্জ্বল হাসি, দীপ্ত চেহারা। সামনে প্রতিশ্রুতিময় ভবিষ্যতের হাতছানি। ওরা আজ রাত সাড়ে এগারোটার ফ্লাইটে উড়ে যাচ্ছে আমেরিকা, মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটিতে। স্কলারশিপ সমেত উচ্চ শিক্ষার সুযোগ  এসেছে দুজনারই। আমাকে ছেড়ে যেতে অনেক সংকোচ, অনেক দ্বিধা ছিল বিজুর। ছিল আমার মনেও। একেবারে একা হয়ে যাবার ভয় গ্রাস করেছিল ভয়ানক ভাবে। এই চোদ্দ বছরে তিলতিল করে যে আনন্দময় সংসারটাকে বাঁচিয়ে তুলেছিলাম দুজনে আবার, যে ঘনিমায় জড়িয়ে ছিলাম মেয়েতে বাপেতে, তার আলো আর উত্তাপ হারিয়ে ফেলার ভয়ে মনটা জড়সড় হয়ে গেছিল খুব। আবার একবার বাঁচাল প্রতিমা, বাসা ছেড়ে ছানাকে উড়তে দিতেই হবে দাবাবু, নিজের জন্যি তুমি ওকে আটকে রাখতে পারনি। ডানা ছেঁটে দিলে ওর মনটাও আস্তে আস্তে ঝিমিয়ে পড়বে, তখন ভাল লাগবে তোমার? আমি আছি, নিরুদি আছে, তোমার দিন ঠিক কেটে যাবে, ভেবনি। দিমনি চলে যাবার পরে কত কস্টো করে মেয়েটাকে বড় করে তুললে, এবার ও ঝখন আরও বড় হতে যাচ্ছে, তুমি কাঁদছ কেন দাবাবু?
না, কাঁদব না। আর মিনিট পনেরো বাদেই চেক ইন শুরু হবে। বিজলি রানি হয়ত শেষ মুহূর্তে কেঁদে ফেলবে। কিন্তু ওর চোখ মোছাতে মোছাতে আমি বলব, কেঁদ না রানি, আজকে মা থাকলে কত্ত খুশি হত বলত? তোমার মা ঠিক যেমনটি হলে খুশি হতেন, আমি ঠিক তেমনটি করতে পেরেছি তোমাকে। এটাই আমার অহংকার। চেয়ে দেখ, আমি আজ মন প্রাণ ভরে হাসছি। অ----নেকদিন পরে।







No comments:

Post a Comment