কোবরাজির কেরামতি
গ্রামের পুন্না জোতদার দিলদরিয়া মানুষ আসরাফ মিঞার বড় বেটা হানিফের বেহা হয়ি গেলো ঝিনাইকুড়ির মোসলেম মিঞার মাঝিলা বেটি নূরনেহারের সাথে। সুন্দরী মেয়ে।
বেজায় ধুমধাম, বেজায় খুশির মেজাজে নয়া বৌয়ের আগমন বাপের বাড়ি থাকি বাপ মাওক ছাড়ি। এটাই তো দুনিয়ার নিয়ম। কুটুমের ঘর বাড়ে, নয়া সংসারে। ভোজবাড়িও ছিল জমজমাট। দুইদিন পর হঠাৎ বেহাবাড়ি সুনসান। কোনোই আনন্দ নাই।মাইকোত্ হিন্দি গান, ডিসকো গান, নাচন কোদন কেছুই নাহি! কেমন যেন স্যামস্যাম করছে বাড়িটা! এমন তো হবা পারেনা!কেছু একটা সমস্যা হইছে মোনাছে। তাই তো! বেপারটা কী, জানিবার তনে বেজায় উসখুশ গাঁয়ের পছুপাড়ার নূরমহম্মদ সরকারের। মনটা তার নুসপুস নুসপুস করিবা ধইছে। নূরমহম্মদ মিঞা তাবিজ কবচ পানিপড়া দি রোগের চিকিৎসা করে। সরল সাদা মানুষ। হাসি মজাক করি কাটায় দিনমান।
সকালবেলা কাছারি ঘরে নূরমহম্মদ এসে হাজির।
----- হাঁ বো মাহাজন, বাড়িত্ আছেন বো?
---- কে ডাকে দেখ তো রে সখিনা? ডাকি আন তো।
সখিনা বিবি সারা দিনমান আসরাফ মিঞার বাড়িতে থাকে, কামকাজ করে।
---- কে বো, কোবরাজ সাহেব! আসেন বো, মালিক যাবা কহিলি। আইসো। ভিতরপাকে আইসেন।
নূরমহম্মদ মিঞা ঘরে ঢুকেই বললো --- সালাম আলেকুম মাহাজন।
----- ওয়ালেকুম সালাম। বসো বো। কেমন আছেন তোরা? সব খবর ভালো তো?
--- সব ঠিক আছে সাহেব। দেখিবা আনু নয়া বৌওক। তোমার বাড়িত্ তো এখন নয়া মেহেমান। নয়া বেহাই বেহান। আসরখান তো জমি গেইছে। বেটার বেহা দিনেন। খুবেই ভালো খবর। নয়া বৌ কেমন হইচে বো?
আসরাফ মিঞা একটা বড় মাপের দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন --- আর কহি না বো! নয়া বৌ সুন্দরী, বাপের বাড়িও বিশাল বো। সবেই ঠিক আছে। কেন্তু হামার কাহারো মনোত্ শান্তি নাহি। সুনসান করোছে দালানকোঠা। কাহারো চোখত্ নিন নাহি।
----- কেনে বো, এমোন কাথা কেনে বাপু! কি এমোন হইল মনোত্ শান্তি নাহি! না বাপু, মোর মনটা খুবেই খারাপ হয়ি গেলো। মোক কহা যাবি না বো!
দীর্ঘশ্বাসটা আরো গভীর হলো আসরাফ মিঞার।
কাহিনীটা কহা ঠিক হবি কিনা ভাবিলো কেছু সময়। কী কহিম বো দুখের কাথা!
কহিল ----- নয়া বৌ বাড়িত্ আনা গেইলো, কতো আনন্দ রে বাপু। তোরা তো বোঝেন বা জি। বেটার বেহা বলি কাথা। দুইদিন থাকি বৌকোনার প্যাট বেথা, পায়খানা বন্ধ। কেছুই খাবা পারেনা। মোনমেজাজ কি ঠিক থাকে বো! মুখচোখত্ কালি পড়ি গিছে। বেটাকোনাও মনমরা হয়ি ঘুরি বেড়াছে এপাক ওপাক। নয়া বৌয়ের শরীর খারাপ, ওমার কি ভালো লাগে কহো। পড়ি গেইছি মহা ঝঞ্ঝাটত্।
---- ডাক্তারোক্ দেখান নি বো?
----- সে কি আর কহা নাগে! বড় বড় ডাক্তার দেখানু বো। হসপিটালত্ নি গেনু। কতলা ট্যাবলেট, ওষুধ দিলি বো, কেছুই কামে আসে না।
---- হায় বাপ! এতো মহা ভেজাল বো! মুই নয়া বহুক অ্যানা দেখিম, যদি মঞ্জুর করেন সাহেব।
---- এ তো ভালোই।
বলেই আসরাফ মিঞা বড় মেয়ে রেহেনা'কে ডেকে বললেন, নূরমহম্মদ' কে নিয়ে যা ভাবীর কাছে।
নূরমহম্মদ নুতন বৌএর সাথে কথা বলে, আশীর্বাদ করে বেরিয়ে এলো। হাসিমুখে, গুনগুন সুর ঠোঁটে। এক বিশাল জয়ের অনুভূতি নিয়ে হাজির আসরাফ মিঞার দরবারে।
------ কেমন দেখিনেন বো নয়া বৌকোনাক্?
------ ভালো হইছে বো। মুই খুশি হইছুঁ। সুখে থাক বেটার বহু। সংসারত্ আনন্দ আসুক।দোয়া চাহি খোদাতাল্লার কাছে। একটা কাথা কহিবা চাহিছু তোমার গোরত্। কহিম?
----- কহেক। শরম করছি কেনে?
----- বৌকোনার তো শরীলডা খারাপ। মুই কি ওষুধ দিবার পারিম? যদি আপত্তি না থাকে। মোর তো কোবরাজি বড়ি। ভালো হয়ি যাবি, মুই গেরান্টি দিম্।
----- মহত্ কোবরাজ তুই বো! কতো বড় ডাক্তারে কেছুই করিবার পারলি না, আর তুই ফুটানি দেখাছি। হায় বাপ!
---- বিশ্বাস করি দুডা বড়ি খিলাই দেখেন। ফল ফলিবেই। বন্দুকের গুলি বরাবর মোর দাওয়ার এ্যাকশন বো।
----- আচ্ছা, দুডা বড়ি তো! খিলাম।
------ কেন্তু এডা কাথা আছে বো, বড়ি দুডা দুইবেলা গরম পানির সাথে খাবা হবে। পয়ান আছে। বড়ি খায়ি পয়ানটা নিবা হোবে।
----- এই তোমহার কোবরাজের ওষুধে পয়ানের ঝামেলা। কহো পয়ানটা কি!
----- বড়ি খায়ি বিড়ি বা সিগারেট খাবা হোবে।
চমকে উঠলো আসরাম মিঞা। বেটিছুয়া কি বিড়ি খায়! হায় খোদা। কি মুশকিলের কাথারে বাপু।
------ দুডা বড়ির সাথে পয়ান খাবার তো বেপার।পয়ান ছাড়া ওষুধ ধরিবি না। আরে বাপু, ওসুখে তো নিয়ম মানিবাই হয়।
ছোটবেটি আনোয়ারা'কে ডেকে সব কথা খুলে বললো আসরাফ মিঞা। বললো, ভাবীক্ কহেক, টেবলেট দুডা খাবা, নূরমহম্মদ পাড়ার মানুষ। পয়ানের কাথা কহি ওষুধ খাবা কহেক। আপত্তি করিলে তো হবিনা। বুঝাই কহিস।
আনোয়ারা ভাবীকে গিয়ে সব বলতেই নয়া বৌ বলে ফেললো ---- ছিঃ কেমন কাথা! মেয়েমানুষ কি বিড়ি খায়! ঘোমটা মাথায় মুখটা ঘুরিয়ে নিলো। ননদ অনেক বুঝালো। পয়ান যখন কোবরাজ কহিছে, মানেন রে বাপু। ফুকফুক করি দুইটান মারি ফেলি দিবেন। কেই বা দেখিবা আইসছে।
যাইহোক, বহুকোনা নিমরাজি হইল।
#
নূরমহম্মদ দুইটা কালো রঙের বড়ি আনি দিলো। এখন একটা, আর একটা রাইতের বেলা।
কাল সকালে যেন খবর দেওয়া হয়, কেমন থাকে না থাকে! অনুরোধ বাপু।
#
পরদিন সক্কাল সক্কাল নূরমহম্মদের বাড়ি এসে পাত্র খবর দিলো, পায়খানা হয়ি গেছে বো। তোমাক মোর আব্বা এখুনি হামার বাড়ি যাবা কহিল মোর সাথে।
নূরমহম্মদ এলো আসরাফ মিঞার ডাকে। নাস্তাপানির বিশাল আয়োজন। খুব খাতির।
আসরাফ আলী কোবরাজকে বললো---- হা বো কোবরাজের বেটা। তোর তো বেজায় ভালো বড়ি বো। এক বড়িতেই মোর বেটার বহু ভালো হয়ি গেইলো। বড় বড় ডাক্তার পারলিনা বো! তুই ভালো করিলু। কেমন করি রোগ ধইনেন বাপু!
নূরমহম্মদ মুচকি হেসে বললো -- মাহাজন, নয়া বৌওক দেখিই বুঝিবা পাইছুনু ওমার ধূমপানের অভ্যাস আছে। নয়া বহু যে পারোছে না বিড়ি ফুঁকিবা শরমে। নয়া বাড়ি, নয়া বহু! নেশা বড়ই পাগল বানায়। বিড়ির নেশা না মিটাবার তনেই পায়খানা বন্ধ! বুঝিবা কি বাকি থাকে আর! বিধান দিনু, কামও সফল।
আসরাফ মিঞা হেসে বললেন নূরমহম্মদকে --- তুই পাঞ্জিয়ার নাকি বো! মুখ দেখি রোগ ধরি ফেলিনেন! তুই তো বিশাল কবিরাজ বো। তোক ধন্যবাদ জানাবা হয় ভাইও। তোক লাট্টু লুঙ্গি কিনি দিম আইজকাই কোবরাজির ফি। গুলগুলা হাসিতে আসরাফ মিঞা বৈঠকখানা জমাই দিলো।
----- না মাহাজন। ওষুধ মাথাত্ ফটাম করি আসি গেইলো, বিড়ি খিলাবাই হবি। বিড়িই পয়ান। ওডাই দাওয়া!
ফরসা লাল টুকটুকা নয়া বহু , কেন্তু ওমার ঠোঁটকোনা যে কালা!
------------------------
No comments:
Post a Comment