Friday, December 27

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অণুগল্প : আত্মজ






হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
আত্মজ

     বাসস্টাণ্ডে এসে দাঁড়াল অলকেশ। বেশ জোরেই হেঁটে এসেছে সে। আজ বেশ গুমট। ভাদ্র মাসে এটাই তো স্বাভাবিক।
     অলকেশ গলার কাছে জামার একটা বোতাম খুলে দিল। মাথাটা নিচু করে জামার ভেতরে মুখের হাওয়া ঢোকাল। বেশ অস্বস্তি লাগছে। সামনের দিকটা বেশ ভীড়। সামান্য একটু যা হাওয়া দিচ্ছে ভীড়ের জন্য তা গায়ে লাগার উপায় নেই।
     অলকেশ ভীড়ের পিছনে চলে গেল। হ্যাঁ, এখানটা বেশ খালি। হাওয়াও আছে। আসলে বাসে তাড়াতাড়ি উঠে জায়গা ধরার জন্য সবাই সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
     হঠাৎ পাশের লোকটির তাকিয়ে অলকেশ কিছুটা চমকে উঠল। নরেনবাবু না? দেশবন্ধু বিদ্যাপিঠের ইতিহাসের শিক্ষক। মুখের সাদা দাড়িতে চেনার উপায় নেই। অলকেশ নিশ্চিত হলো ডানহাতের কাটা দাগটা দেখে। স্যারই গল্প করেছিলেন, ওই দাগটা যৌবনে ডাকাতদের সঙ্গে লড়াইয়ের চিহ্নস্বরূপ।
     ------"কেমন আছেন স্যার?"
     ------"আমি তো ঠিক চিনতে পারলাম না!"
     ------"স্যার, আমি অলকেশ ।"
     ------"অলকেশ! যে তার উত্তরে কম নম্বর পেলে খেপে যেত?"
     অলকেশ কিছুটা লজ্জা পেয়ে বললো, ------"হ্যাঁ স্যার। আপনার এখনও মনে আছে?"
     ------"শুধু এটাই নয় অলকেশ, তোমাদের কেবলই বলতাম কিচ্ছু হবে না!"
     ------"আমাদের ভালো চাইতেন বলেই তো বলতেন। হয়তো আমাদের পথ চলাটা আপনার ঠিক পছন্দ হতো না।"
     ------"না অলকেশ, তোমার এই ধারণা ঠিক নয়। আজ আর মিথ্যে বলে কোনো লাভ নেই। নিজের ছেলেকে নিয়ে আমার একটা অহংকার ছিল। মনে হতো লেখাপড়া সে-ই শুধু করছে। তার কাছে তোমরা কিছু নও।"
     ------"তাতে কী হয়েছে স্যার? আর সত্যিই তো, আমরা আপনার ছেলের যোগ্যতার ধারে পাশেও ছিলাম না।"
     ------"ছেলে আমার অহংকারকে একেবারে ঘুচিয়ে দিয়েছে। এখন আমার ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম। ছেলে আমেরিকার নাগরিকত্ব নিয়েছে। মাসে মাসে টাকা পাঠিয়েই খালাস। গতবছর তোমার কাকিমা মারা গেল। তখনও আসে নি।"
     ------"স্যার, জোর করে মানুষকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করানো যায় না। দাদার কাছে এটাই হয়তো শ্রেষ্ঠ পথ বলে মনে হয়েছে। কিন্তু স্যার, আপনার কী একটা ছেলে? মাথায় আপনার ছেলের সাথে পেরে উঠব না ঠিকই, কিন্তু মনে তো পারতেই পারি। আমি কী আপনার ছেলে নই?"
     স্যার অলকেশকে জড়িয়ে হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগল। অলকেশ স্যারকে বাধা দিল না। আজ অন্তত মানুষটা একটু প্রাণখুলে কাঁদুক।

                       

নীহারুল ইসলাম : যে গল্পটি আমাকে গল্প লিখতে উসকে ছিল






নীহারুল ইসলাম
যে গল্পটি আমাকে গল্প লিখতে উসকে ছিল

 
সাহিত্য পড়ার নেশা সেই স্কুলজীবন থেকে। এই নেশা আমি পেয়েছিলাম আমার আব্বার কাছ থেকে। তাঁর একটি ছোট সংগ্রহ ছিল। ‘রামায়ণ’, ‘মহাভারত’, ‘ইলিয়াড-ওডিসি’, ‘মধুসূদন রচনাবলী’, ‘রামমোহন রচনাবলী’, ‘দীনবন্ধু রচনাবলী’, ‘সৈয়দ মুজতবা আলী রচনাবলী’, কবি বিমলচন্দ্র ঘোষের অনুবাদে ‘খৈয়ামের রুবাইয়াৎ’, সেক্সপীয়ারের ‘রচনাসমগ্র’, ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’, ইংরেজি কবিতার বিখ্যাত সিরিজ ‘GOLDEN TRESARY’, John Millington Synge-এর বিশ্ববন্দিত একাঙ্ক  ‘Riders to the Sea’, ‘সহস্র এক আরব্য রজনী’, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র এবং  অবশ্যই ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ ছাড়াও আলাদাভাবে ছিল ‘সঞ্চয়িতা’ এবং ‘গল্পগুচ্ছ’। আরও আরও কত  বই! তার মাঝে ওই রবীন্দ্রনাথের ‘গল্পগুচ্ছ’ ও ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’  ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় গ্রন্থ। স্কুল ছেড়ে কলেজে উঠে কবিতা লেখার চর্চা করলেও আমার প্রথম প্রেম ছিল ছোটগল্পকে কেন্দ্র করেই। রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প তো ছিলই। সঙ্গে ছিল জাতকের গল্প। পাশাপাশি সমকালের লেখকদের গল্প। ‘দেশ’, ‘কথাসাহিত্য’, ‘রবিবাসরীয় আনন্দবাজার’-এর গল্প। তাছাড়াও শারদ সংখ্যার গল্প কতক্ষণে পড়ে শেষ করব তা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলত। আমার বিকেল কাটত লাইব্রেরিতে। যেখানে মোঁপাসা, হেমিংওয়ে, মার্ক টোয়েন ছাড়াও রাশিয়ান বিখ্যাত সব লেখকদের ছোটগল্প অনুবাদে পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। কিন্তু কবিতা-চর্চা ছেড়ে আমি যে গল্প লিখব, এমন ভাবনা স্বপ্নেও ছিল না।

আমি যে খুব পড়ি এটা আমার এই গঞ্জশহরে অনেকেই জানতেন। একদিন আমাদের লালগোলা বিডিও অফিসের বড়বাবু মানিকদা হঠাৎ একদিন আমাকে ধরে বললেন, নীহারুল- তুমি তো খুব পড়। আমাদের রাজ্যসরকারী কর্মচারীদের একটি মুখপত্র নিয়মিত প্রকাশিত হয়। যার শারদ সংখ্যা সদ্য প্রকাশিত হয়েছে। যদি একটি কপি নাও!

আমি বললাম, দেবেন।

সেদিন সন্ধ্যাতেই তিনি পত্রিকাটি আমাকে দিয়ে গেলেন। পত্রিকার নাম ‘সমন্বয়’। শারদ সংখ্যাটি সাজানো হয়েছে খুব সুন্দর ভাবে। কবিতা, প্রবন্ধ এবং ছোটগল্প। আগেই বলেছি সাহিত্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় ধারাটির নাম ছোটগল্প। তো, সেখানে প্রথম যে গল্পটি পড়লাম তার নাম ‘শকুন’। লেখকের নাম হাসান আজিজুল হক।
গল্পের শুরুটা এরকম- “ কয়েকটি ছেলে বসে ছিল সন্ধ্যার পর। তেঁতুলগাছটার দিকে পিছন ফিরে। খালি গায়ে ময়লা হাফশার্টকে আসন করে। গোল হয়ে পা ছড়িয়ে গল্প করছিল। একটা আর্তনাদের মতো শব্দে সবাই ফিরে তাকাল। তেঁতুলগাছের শুকনো ডাল নাড়িয়ে, পাতা ঝরিয়ে সোঁ-সোঁ শব্দে কিছু একটা উড়ে এল ওদের মাথার ওপর। ফিকে অন্ধকারের মধ্যে গভীর নিকষ একতাল সজীব অন্ধকারের মতো প্রায় ওদের মাথা ছুঁয়ে সামনের পড়ো ভিটেটায় নামল সেটা।”

শুরুর এটুকু পড়ে আমি চমকে উঠলাম। কেন-না, আমি নিজেই তেঁতুলগাছের পাশে খালি গায়ে হাফশার্টকে আসন করে বসে থাকা ওই কয়েকটি ছেলেদেরই একজন। শৈশব-কৈশরে যে বন্ধুদের সঙ্গে আমি এরকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি বহুবার। প্রসঙ্গত বলে নেওয়া ভাল, আমার শৈশব-কৈশর কেটেছিল মাতুলালয়ে। সেটা রাঢ়ভূমির সাগরদিঘী থানার হরহরি গ্রাম। তখন গরু মরে গেলে মাঠে ফেলে দেওয়াটাই ছিল নিয়ম। চর্মকার সম্প্রদায়ের মানুষেরা সেই মৃত গরুর চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে যেত দু’পয়সা উপার্জনের আশায়। তারপর কোথা থেকে খবর পেয়ে মরা গরুর মাংসের লোভে প্রচুর কাক-শকুন-কুকুর এসে জড় হতো সেখানে। আর আমরা জড় হতাম সেই এক-দেড় দিনের পশু-পক্ষীদের লড়ালড়ি করে ভোজ খাওয়া দেখার জন্য। যেটা ছিল আমাদের কাছে খেলা দেখার মতো একটা ব্যাপার। শুধু তাই না, আমরা অপেক্ষা করতাম আর একটা কারণে, সেটা হল- কুকুরের সঙ্গে লড়ালড়ি করতে গিয়ে শকুনের খসে পড়া পালক কুড়নো। যা দিয়ে আমরা তীর বানাতাম আদিবাসী ভাই-বন্ধুদের সঙ্গে শিকার-উৎসবে যোগ দেব বলে। এবং শেষমেশ আমরা যে খেলাটা খেলতাম তা হল, দলের সেই একটি-দু’টি বৃদ্ধ শকুন যারা বেশি খাওয়ার ফলে উড়ে নিজের আস্তানায় ফিরে যেতে পারত না, তাদের মাঠ মাঠ তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ানো।

হাসান আজিজুল হকের ‘শকুন’ গল্পটি পড়ার আগে ব্যাপারটা আমার স্মৃতি-কোঠায় খেলা হিসেবেই গচ্ছিত ছিল। কিন্তু সেটা যে এতটা নিষ্ঠুর-এতটা নির্মম ছিল, তা কখনও বুঝতে পারিনি। যদিও কখনও রফিক হয়ে, কখনও জামু হয়ে, কখনও বা এদাই হয়ে কিংবা কখনও পল্টু হয়ে এক বৃদ্ধ শকুনকে বাগে আনতে নিজের দৈনন্দিন জীবনের দুঃখ, কষ্ট, রাগ, দ্বেষ, আক্রোশ দেখাতে দেখাতে ‘আল টপকে টপকে, উঁচুনিচু জমির উপর দিয়ে ক্ষতবিক্ষত মনে আর দাগরা ঘায়ে, শেয়ালকুল আর সাঁইবাবলার বনে, লম্বা শুকনো ঘাসে, পগারে, সাপের নিশ্বাসের মতো ফাটা মাটির উষ্ণ ভ্যাপসা হাওয়ায়, আখ আর অড়হর-কাটা জমির বল্লমের মতো ছুঁচলো সরল গুঁড়ির আক্রমণে ও আর্তনাদে, একটা মাটির ঢেলার মতো গড়িয়ে, শক্তির বেদনাবোধের অতীত অবস্থায়, আচ্ছন্ন চেতনাহীন তন্দ্রার মধ্যে’ আমিও যেন চলতে চলতে হঠাৎ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠছিঃ
‘কত তারা উঠেছে দ্যাক।’
‘কিন্তুক আলো তো হচে না।’
‘চাঁদ নাইকো যি।’
‘বাতাস দিচে লয়রে?’
‘দিচে, তা শালার গরম বাতাস।’
‘আমার কিন্তুক জাড় লাগচে।’
‘তোর ভয় লেগেচে।
‘কতদূর  এ্যালোম র‍্যা?
‘উরে সব্বোনাশ, মাঝমাঠে এসে পড়িচি, মানুষমারীর মাঠ যে র‍্যা!’

যে-গল্প পাঠ শেষে আমাকে মানুষমারীর মাঠে দাঁড় করিয়ে দেয়, কিছু ভাবতে শেখায়, এমনকি খেলা শেষ করে ‘গাঁয়ে ঢুকতেই এপাশে তালগাছ ওপাশে ন্যাড়া বেলগাছের যে ছোট তোরণটি আছে তারই আবছা ছায়ায় শাদামতো কী’ দেখি, এবং সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারি ‘উ হচে জমিরুদ্দি আর কাদু শ্যাখের রাঁঢ় বুন’, সেই গল্পের লেখক কে, জানতে কৌতুহল হয়। খুব জানতে ইচ্ছে করে, কোথায় তাঁর বাড়ি? তিনি কোথায় থাকেন? কী করেন?

খোঁজ শুরু করি এবং জানতে পারি তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। দর্শনের অধ্যাপক।

বিদেশ হলেও রাজশাহী আমার বাড়ির পাশেই। শুধু পদ্মা পেরোতে হবে। আমি পদ্মা পেরিয়ে গিয়ে হাজির হই সেই লেখকের কাছে। জিজ্ঞেস করি, আপনার ‘শকুন’ গল্পের পটভূমি রাঢ়ভূমি। অর্থাৎ ভাগীরথীর পশ্চিমপাড়। যেখানে আমার শৈশব-কৈশর কেটেছিল। আর আমি এখন যেখানে থাকি সেটা বাগড়িভূমি। আর আপনি যেখানে থাকেন সেই রাজশাহী হল পদ্মাপাড়ের বরেন্দ্রভূমি। তাহলে বরেন্দ্রভূমিতে বসে রাঢ়ভূমির পটভূমিতে এমন গল্প লিখলেন কী করে? প্রত্যক্ষ যাপন ছাড়া কি এমন গল্প লেখা সম্ভব?

আমার প্রশ্ন শুনে হাসান আজিজুল হক হাসছেন। আর আমি বলে চলেছি, আপনার ‘শকুন’ গল্পের চরিত্র, সংলাপ সব আমার চেনা। শুধু তাই না, এই গল্পের এক একটি চরিত্র যেন আমি নিজেই!
অবশেষে হাসান আজিজুল হক মুখ খুললেন। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, রাঢ়ভূমির কোথায় কেটেছিল তোমার শৈশব-কৈশর?
বললাম, সাগরদিঘী থানার হরহরি গ্রাম। মামাবাড়িতে।

তারপর তিনি যা বলেছিলেন তা হল, আদতে তিনি রাঢ়ভূমির মানুষ। বর্ধমানের যবগ্রামে তাঁর জন্ম-বেড়ে ওঠা। তাছাড়াও আমার মামার বাড়ির পাশেই একটি গ্রামে ছিল তাঁর দিদির বাড়ি। সেখানে নিয়মিত এসে থাকতেন তিনি। দিদির খুব কাছ-লাগা ছিলেন। আশপাশের গ্রামে ফুটবল খেলে বেড়াতেন। এমন কী, আমার মামার গ্রামের ফুটবল মাঠেও তিনি ফুটবল খেলেছেন।

আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গিয়েছিলাম। আর সেদিনের পর বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তী লেখক হাসান আজিজুল হক আমার শুধু অতি অন্যতম প্রিয় লেখক হয়ে ওঠেননি, কখন কিভাবে আমার অতি প্রিয় দাদা হয়ে উঠেছেন তা ভাবতেই গর্ব অনুভব করি। 
 

আলমগীর কবীর বাবলুর অণুগল্প : মানুষ বনাম.....





আলমগীর কবীর বাবলু
মানুষ বনাম.....

ঘোষপাড়ায় ঢুকতেই আমার মনে একটা সন্দেহ ঘনীভূত হল। ও মাথায় অবাঞ্চিত কিছু একটার আঁচ পাচ্ছিলাম। ষণ্ডামার্কা কিছু লোক রাস্তার দু' পাশে ঘোঁট পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওদিকে যাব কি যাব না ভাবছিলাম। শেষপর্যন্ত, কি হয় হবে ভেবে যাওয়াই মনস্থির করলাম। কিন্তু কপাল খারাপ, যা ভাবছিলাম এবং যার গন্ধ পাচ্ছিলাম শেষতক তাই ঘটে গেল। অর্থাৎ রিকশাটা যেই না ষণ্ডাদের কাছাকাছি এলো, অমনি ওরা পথ আগলে রিকশার গতিরোধ করল। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হতভম্ব। ভেতরে ভেতরে ঘামছি আর ভাবছি, দিনে দুপুরে এ কেমন বর্বরতা, প্রকাশ্য মাস্তানি! কিন্তু আমার ভাবনার পালে আচানক ঘাই বসিয়ে, রাগে কটমট করে তাকিয়ে ওদের পালের গোদাটি গর্জে উঠলো- ওই তোর নাম কি?
সন্ত্রস্ত আমি ঈষৎ আমতা আমতা করে বললাম-শরৎ। আর যায় কোথা! ওরা বুঝি এমন কিছুর জন্যই ভয়ানক মুখিয়ে ছিল! আমার নাম উক্ত হওয়া মাত্রই মানুষ অবয়বিক ঐ হিংস্র প্রাণীগুলো বাঘের মতো হালুম করে আমার উপর সবলে ঝাঁপিয়ে পড়ল! ব্যাপার কি, বুঝে ওঠার আগেই কিল-ঘুষি-লাথির এলোপাথাড়ি তান্ডব আমার সর্বাঙ্গে আছড়ে পড়ল! সঙ্গে না-খাস্তা গালির তুবড়িও ছুটল! ওদের সাঁড়াশি আক্রমণে আমি বোবা ও বোকা বনে গেলাম। ক্ষণিকের হতাশায় ডুবতে ডুবতে বোধবুদ্ধিশূন্য আমি অতঃপর অস্পষ্ট শুনলাম- মালুর বাচ্চা মালু, হিন্দু হয়ে মুসলমানের গায়ে হাত! আজ সব কয়টারে প্যাকেট করে ইন্ডিয়ায় পাঠাব। ওদের ভেদরেখাসূচক কথাগুলো কিংবা না-খাস্তা খিস্তিগুলো আমাকে যেন খেজুর কাঁটার মতো অনবরত খোঁচাচ্ছে। ফলে, কী এক দুর্বোধ্য কষ্টে-যন্ত্রণায় আমি পাথরের মতো নির্বাক, নিস্তব্ধ, প্রতিক্রিয়াহীন। বরং রাগে-ক্ষোভে,দুঃখে-অপমানে,ঘেন্নায়-ধিক্কারে নিজের জাত-পাত-সমগোত্রতা সব লুকালাম। তাছাড়া দেবতাতুল্য বাবাকে দোষ দিতেও মন চাইল না। যে বাবার অনেক কষ্টের ফসল এই আমি শরতের শুভ্র এক সকালে জন্মেছিলাম বলে বাবা তাঁর প্রিয় ঋতুর নামানুসারে আমার নাম রেখেছিলেন শরৎ; যিনি কর্মে-চিন্তায়-বিশ্বাসে ছিলেন উদার, মানবতাবাদী,অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল এবং যার দর্শন ছিল- ধর্মের চেয়েও মানুষ বড়, সেই পূজনীয় বাবার দর্শনকে মিথ্যে প্রমাণ করে কেন এই ধর্মান্ধ-বিকারগ্রস্ত-নরপশু-হায়েনাদের কাছে স্বীয় ধর্মপরিচয় দিয়ে নিজেকে এবং স্বর্গবাসী বাবাকে ছোট করব, খাটো করব! তাহলে কি মানুষের চেয়েও ধর্ম বড়? নাম বড়?

আমার বুকটা পাতাঝরা বৃক্ষের মতো হু হু করে উঠলো।




মেহেবুব আলম - সেলিনা হোসেনের ‘নারীবিশ্ব’ : নারীর অন্তঃস্বর







মেহেবুব আলম -
সেলিনা হোসেনের ‘নারীবিশ্ব’ : নারীর অন্তঃস্বর


সেলিনা হোসেন বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির একজন অগ্রগণ্য লেখক। বৃহত্তম পাঠক সমাজে তাঁর পরিচয় একজন সার্থক কথাশিল্পী হিসেবেই। তাঁর রচনার মূল সুর হল সমাজ ও মানুষের কল্যাণ সাধনা। মানবতাবাদী এই লেখক মানুষকে দেখেছেন সমাজ-রাজনীতির প্রেক্ষাপটে। কথাসাহিত্যের আঙ্গিনায় তিনি বহুদিন ধরে বিচরণ করেছেন। তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘উৎস থেকে নিরন্তর’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা একশোরও বেশি। তিনি তাঁর কথা সাহিত্যে মূল্যায়ন করেছেন ‘সমাজ ও রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যক্তির দ্বন্দ্বময় জীবন-প্রবাহ’। তবে আমরা যদি সেলিনা হোসেনের প্রবন্ধগুলির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি তাহলে একটু ভিন্ন বাস্তবধর্মী সেলিনা হোসেনকে দেখতে পাবো।
সেলিনা হোসেন তাঁর এক নির্দিষ্ট দর্শন থেকে কথাসাহিত্যের চরিত্রগুলি নির্মাণ করে থাকেন। যার ভিত্তিভূমি তাঁর প্রবন্ধগুলি। তাঁর প্রথম প্রবন্ধগ্রন্থ ‘স্বদেশে পরবাসী’র (১৯৮৫) দ্বিতীয় মুদ্রণের মুখবন্ধে তিনি বলেছেন, যে-কথা তিনি কথাসাহিত্যে বলতে পারেন নি, তা বলতে তাঁকে প্রবন্ধের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল। তিনি আরও বলেছেন, প্রবন্ধগুলি তাঁর ব্যক্তিগত ভাবনার বহিঃপ্রকাশ, কোনও বড় ক্যানভাস নয়, ছোট ছোট পরিসরে টুকরো টুকরো চিন্তা। ফলে সেই সব চিন্তাসূত্র ও যুক্তির শৃঙ্খলা নির্মাণ করেছে নারীবিশ্ব-র পরিসর।
সেলিনা হোসেন যে তাঁর সমকালের একজন বিশিষ্ট চিন্তক তা অনস্বীকার্য। কেননা স্বাধীন বাংলাদেশের একজন অগ্রগণ্য চিন্তক হিসেবে তিনি নিজেকে তৈরি করেছেন তিল তিল করে। দেশ, কাল ও সমাজের কথা যে তিনি কতভাবে ভেবেছেন তার স্পষ্ট প্রকাশ পেয়েছে বিবিধ বিষয়ে লেখা তাঁর প্রবন্ধগুলিতে। আবার সমাজের নারীর অবস্থান নিয়েও তিনি অত্যন্ত গভীরভাবে ভেবেছেন। তাঁর নারীর অধিকার, নারী-মুক্তি, নারী-প্রগতি, নারী-পুরুষের সম্পর্ক বিষয়ক চিন্তা-চেতনা তাঁকে সমকালের বিশিষ্ট নারীবাদী লেখক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সেলিনা হোসেন তাঁর এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন-
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমার প্রথম চিন্তাটি হল নারীকে নিজের শক্তিতে তৈরি করতে হবে।...তারপর নিজের ভেতরের শক্তিকে চিনতে হবে নারীকেই।১
নারীবিশ্ব গ্রন্থটি অধ্যাপক ড. বরেন্দু মণ্ডলের সম্পাদনায় ‘অভিযান পাবলিশার্স’ থেকে ২০১৯ এর জানুয়ারি মাসে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেছে। অধ্যাপক মণ্ডল তাঁর সম্পাদিত এই গ্রন্থটি গৌরী আইয়ুবকে উৎসর্গ করেছেন। ভূমিকা অংশে তাঁর বক্তব্য থেকেই এই গ্রন্থটির বিশেষ গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা জানতে পারি-
বাংলাদেশের অন্যান্য লেখকদের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে সেলিনা হোসেনের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। অন্যদিকে, বাংলাদেশের বই পশ্চিমবঙ্গে আজও সহজলভ্য নয়। সেলিনাদির আগ্রহে ও ‘অভিযান পাবলশার্স’-এর তরুণ প্রকাশক মারুফ হোসেনের উদ্যোগে সেলিনা হোসেনের নারী-অধ্যয়ন বিষয়ক প্রবন্ধগুলো একত্রে নারীবিশ্ব নামে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হল।২
এই গ্রন্থে সেলিনা হোসেনের বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত প্রবন্ধগুলিকে গ্রন্থসম্পাদক অধ্যাপক মণ্ডল পাঁচটি বিভাগে সুন্দরভাবে সজ্জিত করেছেন। বিভাগগুলি হল যথাক্রমে-
-সমাজ, সংস্কৃতি ও নারী প্রগতি,
-দেহ রাষ্ট্র নৈতিকতা ও নারী-অধ্যয়ন,
-নারীর প্রতিবেদন : প্রতিবেদনে নারী,
-ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা,
-আলোকিত নারী : নারী মহিয়সী।
প্রথমটিতে সাতটি, দ্বিতীয়টিতে দশটি, তৃতীয়টিতে চারটি, পঞ্চমটিতে চারটি, শেষ অধ্যায়টিতে ছয়টি প্রবন্ধ সন্নিবিষ্ট হয়েছে।
অন্যান্য রচনার মতোই লেখকের এই প্রবন্ধগ্রন্থেও ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সারল্য ও সাবলীলতা লক্ষ্য করা যায়। ছোট ছোট বাক্য ব্যবহার তাঁর রচনার একটি বড় বৈশিষ্ট্য। যা এখানেও দৃশ্যমান। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রবন্ধের শুরুর বাক্যটি সংক্ষিপ্ত সত্য কথন। যেমন- ‘ঘর গেরস্থির রাজনীতি’ প্রবন্ধের প্রতিটি অধ্যায়ের শুরুতেই আমরা এটি লক্ষ্য করব। ‘অবলা’ অধ্যায়ের শুরুতেই লিখেছেন-
“এটি একটি স্ত্রীবাচক শব্দ। ...নারী, ললনা। অর্থ থেকে স্পষ্টই প্রতীয়মান হয় যে, বলহীন, অক্ষম যে সে নারী।”৩
‘রত্নগর্ভা’ অধ্যায়ের শুরুতে রত্নগর্ভা সম্পর্কে লিখছেন-
“রত্নগর্ভ অর্থ যার মধ্যে রত্ন আছে। এই শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রত্নাগর্ভা। ...গর্ভধারণ একটি জৈবিক প্রক্রিয়া। নারী এককভাবে গর্ভধারণ করতে পারে না।”৪
‘হুরপরি’ অধ্যায়ের শুরুতেই লিখছেন-
“হুর আরবি শব্দ...পরি ফারসি শব্দ। বাংলা অভিধানে পরি অর্থ পক্ষ বিশিষ্ট কল্পিত সুন্দরী, অতিশয় সুন্দরী নারী।”৫
এরকম বাক্যের সজ্জাতেই তিনি তাঁর যুক্তিজাল সজ্জিত করেছেন।
নারীবিশ্ব গ্রন্থের প্রথম প্রবন্ধ হল ‘সংস্কৃতি ও নারী’। আটটি পরিচ্ছেদে পরিসমাপ্ত কুড়ি পৃষ্ঠাব্যপি এই দীর্ঘ প্রবন্ধে সেলিনা হোসেন সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার জন্য নারী ও পুরুষের যৌথ অনুশীলন প্রয়োজন বলে মনে করেছেন। যদিও সংস্কৃতি রক্ষার গুরু দায়িত্ব যেন নারীর কাঁধেই রয়েছে। সমাজের পঁচাশি ভাগ নারীকে বাড়ির মাননীয় পুরুষ সদস্যের খাওয়া-দাওয়ার পর বেড়ালের মতো চেঁছেপুছে খেতে হয় হাড়ির তলানিটুকু। আবার অসংখ্য পুরুষ অবলীলায় ছেড়ে চলে যায় তার সন্তানকে। তবে একজন নারীর পক্ষে সম্ভব নয় বলবান পুরুষের মতো শিশুদের মাতৃহীন করে নিজের সুখের খোঁজে চলে যাওয়া। তথাপি এই দুঃখ নির্ভর পৃথিবী শুধুমাত্র নারীর, আর স্বর্গ ও স্বর্গের যাবতীয় সুখ শুধু পুরুষের এমন ভাবনা প্রাবন্ধিক কখনই সমর্থন করতে পারেন নি। বাংলাদেশের সংস্কৃতি যে নারীর গৃহস্থালির চেতনাকে কোণঠাসা করে রেখেছে, তা তিনি নির্দ্বিধায় পাঠককে জানিয়েছেন। ‘ভাগ্যবানের বউ মরে আর অভাগার গোরু মরে’ -নারীর প্রতি এই বঞ্চনা ও ব্যঙ্গাত্মক প্রবাদ গোটা বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছে। এই প্রবাদে অনেকেই  প্রফুল্ল হয়ে থাকেন বিশেষত পুরুষ সমাজ কিন্তু প্রাবন্ধিক সেলিনা হোসেন প্রফুল্ল হতে পারেন নি। কেননা এই প্রবাদের অন্তর্নিহিত যে অর্থ নারীকে গোরুর চেয়েও কম মূল্যবান ভাবা তা তিনি ভুলে যান নি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীকে সংসারের চার দেয়ালের ভেতর বন্দি করে রাখার নানাবিধ উপায় খোঁজে। তাই আমাদের সমাজে একটি সংস্কৃত শ্লোক খুবই জনপ্রিয়-‘পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম পিতা হি পরমন্তপ’।
‘সীমান্তে কাঁটাতার : নারীর কথা’ প্রবন্ধ থেকে আমরা জানতে পারি যে, নববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার দুপাশে মিলনমেলা আয়োজিত হয়। দুদেশে বাস করা আপনজনদের সঙ্গে দেখা হয় নববর্ষের এই দিনেই। তবে সত্তর দশক পর্যন্ত দুই দেশের মানুষ বিনা বাধায় যাতায়াত করতে পারত। দেখা হত স্বজনদের সঙ্গে। কয়েক বছর আগেই ভারতীয় কতৃপক্ষ সীমান্তে কাঁটাতার দিয়ে সুরক্ষিত করার ফলে ইচ্ছে মত যাতায়াত ও যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফলস্বরূপ অসুবিধায় পড়ে সাধারণ গরিবেরা। এই গরিব মানুষেরা পাসপোর্ট-ভিসা করে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে পারে না বলেই নববর্ষের এই উৎসবের জন্য তারা অপেক্ষা করে গোটা বছর।
এপ্রসঙ্গে উল্লেখ্য কাঁটাতারের সঙ্গে সম্পর্কিত সেলিনা হোসেনের ‘মধ্যরাতের ঘর বদল’ নামক একটি ছো্টগল্পও আমরা পাই। একথা ঠিক ‘ভারত-বাংলাদেশ স্থল সীমান্ত বিনিময় চুক্তি’র ফলশ্রুতিতে ৩১ জুলাই ২০১৫-য় ছিটমহল স্বাধীনতা পেইয়েছে। কিন্তু একদিকে যেমন উদ্বাস্তু ছিটমানুষদের অসহায় জীবনযাপন আজও আমাদের দেশভাগের সমকালীন বাস্তবতাকে মনে করায়। তেমনি অন্যদিকে, ছিটবাসীদের এতদিনের মিথ্যা পরিচয়ের আবরণ সরিয়ে প্রকৃত সত্য পরিচয়ে আসতে পারবে কিনা, এ প্রশ্নও আমাদের ভাবিয়ে তোলে। এই গল্প ছাড়াও আমরা সেলিনা হোসেনের কাঁটাতার সম্পর্কিত ‘ভূমি ও কুসুম’ নামক উপন্যাস পাই। যেখানে তিনি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বদলে যাওয়া অসহায় ছিটবাসীদের জীবনযাত্রার নবতর সংকটগুলিকে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন।
‘যে কথা অনবরত বলতে হবে’ প্রবন্ধে ইসলাম ধর্ম প্রবর্তনের সময় থেকেই নারীর মর্যাদা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা কতটা উন্নত ও উন্মুক্ত ছিল তা প্রাবন্ধিক সেলিনা হোসেন দেখিয়েছেন। বিবি খাদিজা ছিলেন হজরত মুহাম্মদ(সঃ) এর থেকে পনেরো বছরের বড়ো, তিনিই মহানবীকে বিবাহের প্রস্তাব দেন এবং পরবর্তীকালে যখন মুহাম্মদ(সঃ) চল্লিশ বছর বয়সে নবুয়তপ্রাপ্ত হন তখন সেই বিশেষ উপলব্ধির কথাও তিনি বিবি খাদিজাকেই সর্বপ্রথম জানান। এই উদাহরণ পাঠকের সামনে রেখে ইসলামে নারীর মর্যাদার পাশাপাশি মানুষ হিসেবে মৌলিক অধিকারের প্রসঙ্গটি সেলিনা হোসেন ব্যাখ্যা করেছেন।
এছাড়াও এই বিভাগে যে প্রবন্ধগুলি রয়েছে সেগুলি হল- ‘নারী প্রগতির ভিন্ন দিক’, ‘ঘরগেরস্থির রাজনীতি’, ‘ঘরগেরস্থিতে নোনাজল’, ও ‘নারীর প্রজ্ঞা’ প্রভৃতি।
নারীবিশ্ব গ্রন্থের প্রবন্ধের দ্বিতীয় বিভাগটি হল- ‘দেহ রাষ্ট্র নৈতিকতা ও নারী-অধ্যয়ন’। এই বিভাগের ‘নারীর জীবন ও নারী-অধ্যয়ন’ প্রবন্ধে সেলিনা হোসেন বলতে চেয়েছেন, নারীর জীবনকে ঘিরে মিথ তৈরি করেছে পুরুষ। প্রাচীনকাল থেকেই নারীর জীবনকে বৃত্তাবদ্ধ করে রাখার চেষ্টা করেছে পুরুষ। নানাভাবেই এটা বলার চেষ্টা করেছে যে, নারী যৌনতার আধার এবং যৌনকর্ম ও সন্তানধারণ করাই তার জীবন। প্রসববেদনা নারীর জন্য ঈশ্বর প্রদত্ত শাস্তি। তাই এই শাস্তি নারীকে পেতেই হবে। এই অজুহাতের পাশাপাশি প্রায় তিনশো বছর ধরে নারীকে ডাইনি আখ্যায়িত করে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ নারীকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। সেলিনা হোসেন আমাদের জানিয়েছেন স্থান কাল ভেদে শোষকের পরিবর্তন হলেও শোষিত নারীর কোনও পরিবর্তন নেই। শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্ব জুড়েই নারী নির্যাতনের স্বীকার হয়ে এসেছে। এই প্রসঙ্গে তিনি ব্রিটেনের কথা উল্লেখ করে নারী নির্যাতনের বিষয় তুলে ধরেছেন। খ্রিষ্টীয় ১৩৪৭ থেকে ১৩৪৯ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনে প্লেগের মহামারির ফলে মৃত্যুর যে বিপর্যয় ঘটেছিল তার জন্য দায়ী করা হয়েছিল নারীদের। নারীরা ডাইনি, তারা প্লেগ ছড়ায়। তাই প্লেগ দমন করার জন্য অসংখ্য নারীকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল- ‘Women are by nature instrument of Satan. They are by nature cruel, a structural defect rooted in the original creation.’৬
তিনি আরও জানিয়েছেন যে, মনুসংহিতা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম একটি স্মৃতিশাস্ত্র , সেখানেও নারী-বিদ্বেষমূলক নীতি প্রবলভাবে দেখা যায়। মনু বিধান দিয়েছিলেন যে, মেয়েরা শৈশবে পিতা, যৌবনে স্বামী ও বার্ধক্যে পুত্রের অধীনে থাকবে। বিশ্বস্ত স্ত্রীর দায়িত্ব স্বামীকে দেবতা হিসেবে পুজা করা।
‘জেন্ডার, ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশ’ প্রবন্ধে সেলিনা হোসেন জানিয়েছেন, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে জেন্ডার প্রত্যয়টি একটি উন্নয়নের ইস্যু। নারী-পুরুষের জেন্ডার ভূমিকা নির্ধারিত হয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক আলোকে। সেক্স নারী-পুরুষের লিঙ্গ নির্ধারণ করে। আর জেন্ডার নারী-পুরুষের সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিচয় নির্ধারণ করে। তিনি এই প্রবন্ধে জেন্ডারের সঙ্গে ক্ষমতায়ন প্রত্যয়টির গভীর সম্পর্কের কথা বলেছেন। ক্ষমতায়ন ব্যক্তির ভেতর আত্মবিশ্বাস দৃঢ় করে, যার দ্বারা সে সমস্যা সমাধান করতে শেখে। পরমুখাপেক্ষী না হয়ে স্বনির্ভর হয়। নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে তিনটি ভাগের কথা তিনি বলেছেন- অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, সামাজিক ক্ষমতায়ন ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। তবে নারীর ক্ষমতায়ন পুরুষের পাশাপাশি একই অর্থে ব্যাখ্যা করা যায় না। সেজন্য ক্ষমতায়নের ধারণা পুরুষের জন্য এক রকম, নারীর জন্য অন্য রকম।
এছাড়াও এই বিভাগের অন্যান্য প্রবন্ধগুলি হল- ‘দুর্নীতি ও নারী’, ‘প্রান্তিক নারী ও নিরাপত্তা’, ‘নারী ও নির্বাচন’, ‘যাতে বঞ্চিত না হই’, ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি’, ‘শক্ত হোক নারীর শক্তির জায়গা’, ‘তোমারে বধিবে যে...’, ‘বেইজিং কর্মপরিকল্পনা ও নারীর ক্ষমতায়ন’ প্রভৃতি।
‘মঙ্গোলিয়ার নারীরা’ নামের প্রবন্ধটি আসলে একটি গ্রন্থ সমালোচনা। Martha Avery-এর লেখা ‘Women of Mongolia’-বইটি পড়ার অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন লেখক সেলিনা হোসেন। এখানে তিনি দেখিয়েছেন নারী মুক্তি কেবল পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে ক্রমাগত লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যে আসে তা সর্বদা ঠিক নয়। সমাজতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যেই যে প্রকৃত সাম্যবাদ তার মধ্য দিয়েই নারীর প্রকৃত সমতা ও ক্ষমতায়ন সম্ভব।
এই প্রবন্ধটি ছাড়াও এই বিভাগে আছে ‘কিশোরীদের জন্য কিছু করা’ নামক আরও একটি প্রবন্ধ এবং আছে লেখকের দুটি সাক্ষাৎকার।
সেলিনা হোসেন তাঁর লেখক জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে দেশভাগ ও তার প্রভাব, ভাষা আন্দোলন ও তার প্রভাব, আবার কখনোবা মুক্তিযুদ্ধ ও তার প্রভাব নিয়ে তাঁর কথাসাহিত্যের অবয়ব গঠন করেছেন। দেশভাগের প্রভাব নিয়ে লিখেছেন ‘সোনালি ডুমুর’ এর মতো উপন্যাস। যেখানে লেখক অনিমেষের ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠার মধ্যদিয়ে দেশভাগের ভয়ঙ্কর দিকটিকে ফুটিয়ে তুলেছেন। ভাষা আন্দোলনের প্রভাব নিয়ে লিখেছেন ‘যাপিত জীবন’ এর মতো উপন্যাস। যেখানে জাফরের স্বচ্ছ প্রতীকচিত্রে বাঙালির শেকড় আর অস্তিত্বের কথা লেখক ঘোষণা করেছেন। আবার ‘পরজন্ম’, ‘যুদ্ধজয়’, ‘সখিনার চন্দ্রকলা’ বা ‘শকুনের ছায়া’র মত গল্পগুলি এবং ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’, ‘গায়ত্রী সন্ধ্যা’, ‘গেরিলা ও বীরাঙ্গনা’র মতো উপন্যাসগুলি মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত। যার ভিত্তিভূমি হল ‘মাতৃভাষা দিবস ; নারীর ভূমিকা’, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও নারী’র মত প্রবন্ধ। যেখানে তিনি ভাষা আন্দোলনে নারীর ভূমিকা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন-
১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে সূচিত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে নারী ধর্মের ধুয়া তুলে নিষ্ক্রিয় থাকেনি। সভায় মিছিলে অংশগ্রহণ করেছে। এমনকি স্কুলের ছাত্রীরাও মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য রাস্তায় নেমে এসেছে।  ...পরিবারের বাঁধার কারণে মেয়েরা অনেক সময় বোরখা পরে মিছিলে আসত।৭
‘মুক্তিযুদ্ধ ও নারী’ প্রবন্ধে আমরা পাই করুণা বেগম, মিরাসি বেগম, কাঞ্চনমালার মতো মুক্তিযোদ্ধা নারীচরিত্রের কথা। করুণার স্বামী মুক্তিযুদ্ধে মারা যাবার ঠিক এক মাস পরেই তিনি তার তিন বছরের শিশুকে মায়ের কাছে রেখে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। শুধু যোগদানই নয়, পঞ্চাশ নারীযোদ্ধার তিনি কমান্ডার পদে উন্নীত হন। এমন আর এক চরিত্র হল মিরাসি বেগম। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি তার চার ছেলেমেয়ে নিয়ে মিরাসি ক্যাম্পে একদিকে রান্নার কাজ করে সংসার সামলাতেন, আর অন্যদিকে ছদ্মবেশে অস্ত্র-গোলাবারুদ আমদানী ও সরবরাহ করতেন। তিনি মদন, কান্দাইল, বাজিতপুর ও কাপাসাটিয়ার যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন এবং একাত্তরের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি নিজেকে যুদ্ধে যুক্ত রাখেন। এই প্রবন্ধে সর্বোপরি যে চরিত্র আমাদের দৃষ্টি আকর্ষন করে তা কাঞ্চলমালা। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ঠিক দুবছর আগে পাকিস্তানি বাহিনীর মেজর জাহিদের হাতে ধরা পড়েন। দীর্ঘদিন ধরে চলে পাশবিক অত্যাচার। পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলে চলে আবারও অকথ্য অত্যাচার। তাঁকে অর্ধমৃত অবস্থা থেকে উদ্ধার করে মুক্তিযোদ্ধারা। তাই সুস্থ হয়ে উঠেই কাঞ্চনমালা যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। আবার বাকি সময় তিনি নার্স হিসেবে আহত যোদ্ধাদের শুশ্রূষাও করেন। তিনি এমন এক নারীর উদাহরণ, যিনি ধর্ষণের শিকার, সশস্ত্র যোদ্ধা এবং সেবিকা। তবে এই সমস্ত নারীরা কেউই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি, পাননি যথার্থ মর্যাদাও। বরং অদৃশ্য হয়ে গেছে তাঁদের বীরত্ব ও সাহসিকতার পরিচয়। এই প্রবন্ধের একেবারে শেষে প্রাবন্ধিক বলেছেন-
আমি আমার ‘যুদ্ধ’ উপন্যাসটি শেষ করেছি এভাবে : যুদ্ধে একটি পা হারিয়ে প্রেমিক ফিরে এসেছে স্বাধীন দেশে। প্রেমিকা তখন পাকিস্তান সেনা কতৃক ধর্ষিত হয়ে গর্ভবতী। দুজনের যখন দেখা হয় তখন প্রেমিকা প্রেমিককে বলে, ‘ভালো কইরে দেখো হামাক। তুমহি দেছো পা। হামি দিছি জরায়ু। তুমহার পায়ের ঘা শুকায়ে গেছে। কয়দিন পর হামারও জরায়ু ঘা শুকায়ে যাবে। হামি ভালো হয়ে যাবো।৮
এছাড়াও এই বিভাগে যেসমস্ত প্রবন্ধ রয়েছে সেগুলি হল- ‘জসীমউদ্‌দীনের আশমনি ও অন্যরা’, ‘বধ্যভূমিতে চোখ বাঁধা সেলিনা পারভীন’ প্রভৃতি।
সেলিনা হোসেনের ‘বেগম রোকেয়াকে আমাদের কেন প্রয়োজন’ প্রবন্ধে পাঠককে জানিয়ে দিয়েছেন যে, আমাদের বর্তমান সমাজে বা জীবনে বেগম রোকেয়ার উপস্থিতি যে অনিবার্য তা বিনা দ্বিধায় আমাদের স্বীকার করতেই হবে। কেননা তিনি তাঁর বুদ্ধি, মনন ও দার্শনিক চিন্তা নিয়ে নিজের সময়ের চেয়ে একশো বছর এগিয়ে। প্রাবন্ধিক সেলিনা হোসেন মনে করেন, আমাদের এক অন্ধকারময় সময় গ্রাস করেছে, আর সেই অন্ধকার থেকে আলোর পথের দিশা শুধুমাত্র বেগম রোকেয়াই দিতে পারেন। পাশাপাশি সেলিনা হোসেন নারীদের অর্থনৈতিক মুক্তির কথাও জোর দিয়ে বলেছেন-
হত্যা, খুন, ধর্ষণ এবং যৌতুকের কারণে নির্যাতন আজ এই সমাজ ব্যবস্থার ভেতরে গা-সওয়া হয়ে গেছে।... যতদিন নারীজাতির অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব না হবে, ততদিন পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থায় এই পীড়ন তাদের নিয়তি। ...শক্তি অর্জনের জন্য তাঁকে আমাদের প্রয়োজন।৯
নারীর আত্মশক্তি জাগরণের জন্য সেলিনা হোসেন উপমহাদেশের প্রথম নারীবাদী লেখক হিসেবে ‘বাঙালির জাগরণে রোকেয়ার আত্মশক্তি’ প্রবন্ধে রোকেয়া সাখাওয়াতের প্রসঙ্গ টেনেছেন।  রোকেয়া সাখাওয়াত নারীর শিক্ষার জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মেয়েদের স্কুলে ভরতি করানোর জন্য অভিভাবকদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন। তবে শুধু স্কুল প্রতিষ্ঠা করেই তিনি ক্ষান্ত হন নি, বরং তিনি মেয়েদের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। আবার ‘আঞ্জুমানে-খাওয়াতীনে-ইসলাম’ স্থাপন করে মেয়েদের কুটিরশিল্পে নিয়োজিত করেছিলেন। তিনি মেয়েদের জীবনকে শুধু পতি-দেবতার মনোরঞ্জনেই সীমাবদ্ধ রাখার তীব্র বিরোধী ছিলেন। তিনি উন্নয়ন বলতে বুঝেছিলেন নারী-পুরুষের সামগ্রিক উন্নয়ন। পিছিয়ে থাকা নারীসমাজকে জেগে উঠে পুরুষের সাথে এক সারিতে আসতে বলেছেন।
‘ইতিহাসের প্রীতিলতা, বাংলাদেশের প্রীতিলতা’ প্রবন্ধে সেলিনা হোসেন দেখান যে, ১৯১১ সালের ৫ মে তারিখে বাংলাদেশের চট্টোগ্রামে গায়ের রং কালো নিয়ে প্রীতিলতা জন্মেছিল জন্য তার বাবার মন খারাপ হয়ে যায়, সেই প্রীতিলতা মাত্র একুশ বছর বয়সে নিজের জীবন দিয়ে ইতিহাসকে সাক্ষী করে প্রমাণ করেছে যে, মেয়ে হয়ে জন্মগ্রহণ কোনো অপরাধ নয়।
এছাড়াও এই বিভাগে যেসমস্ত প্রবন্ধ রয়েছে সেগুলি হল- ‘সুফিয়া কামাল : জীবন ও শিল্পের কবি’, কিংবদন্তি ইলা মিত্র ও তাঁর তেভাগা আন্দোলন’, ‘গণিতের হিসাব ও সাহিত্যে নারীর বিস্তার’ প্রভৃতি।
‘নারীবিশ্ব’ নামের মধ্যেই রয়েছে নারীবাদের দ্যোতনা। নারীবাদী চেতনাকে দার্শনিক জগতে মানবতাবাদের চরম পরিণতির ক্ষেত্রে প্রথম ও সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সোপানরূপে গ্রহণ করা হয়ে থাকে কিন্তু কার্যক্ষেত্রে প্রায়শয়ই নারীবাদ নারীর অধিকারের আন্দোলন এবং পুরুষ-বিদ্বেষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। সেখানে সেলিনা হোসেনের দৃষ্টিকোণ অত্যন্ত স্পষ্ট ও প্রসারিত। তিনি সার্বিক ভাবেই মানবমুক্তি তথা সমাজমুক্তির প্রয়োজনেই নারীবাদকে গ্রহণ করেছেন। সেটা এই সংকলনগ্রন্থের প্রথম ও প্রতিনিধিত্বমূলক প্রবন্ধটিতেই স্পষ্ট। যেকথাগুলি রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে শার্ল্ট পারকিন্স গ্রিনম্যান সকলেই নিজের মতো করে বলেছেন। ‘নারীকে আপন বিশ্ব জয় করিবার কেন নাহি দিবে অধিকার’ জাতীয় বক্তব্যে ফুটে ওঠে প্রচ্ছন্ন নারীবাদ, সেখান থেকে বাংলাতেই আমরা দেখেছি মল্লিকা সেনগুপ্ত বা বাণী বসুদের রচনায় স্পষ্ট দাবী বা কখনো কখনো তীব্র অভিযোগও। সেসব বিচারে সেলিনা হোসেনের দৃষ্টিভঙ্গিতে স্পষ্টই একটা পথের অনুসন্ধান। প্রথমত নারীকে উপযুক্ত পরিস্থিতিতে পুরুষের সমশক্তি সম্পন্না রূপে আবিষ্কার করা, নারীর প্রতি বঞ্চনার দিকগুলিকে চিহ্নিত করা এবং সর্বোপরি সমাজগঠনে পুরুষের সমান নারীর ভূমিকার দিকটিকে তিনি তুলে ধরেছেন এবং সবটাই তিনি করেছেন আমাদের এই উপমহাদেশের পরিপ্রেক্ষিতেই। এটাই তাঁর বিশিষ্টতা।
নারীবিশ্ব গ্রন্থটির কোনও কোনও প্রবন্ধগুলির প্রকাশকাল উল্লেখ থাকলেও বেশিরভাগ প্রবন্ধগুলিরই প্রকাশকাল উল্লেখিত হয়নি। সাধারণ পাঠকের পক্ষ থেকে সম্পাদকের কাছে এই একটি মাত্র দাবী থেকে গেল।



নারীবিশ্ব : সেলিনা হোসেন ✪ সম্পাদনা : বরেন্দু মণ্ডল ✪ প্রকাশনা : অভিযান পাবলিশার্স ✪ প্রথম প্রকাশ : জানুয়ারি ২০১৯ ✪ মূল্য : ৪০০ টাকা


তথ্যসূত্র-
১)  অগ্রবীজ, ৩য় বর্ষ, ২য় সংখ্যা, ২০০৯
২)  হোসেন সেলিনা নারীবিশ্ব (ভূমিকা অংশ), বরেন্দু মণ্ডল (সম্পাদিত), অভিযান পাবলিশার্স, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ : জানুয়ারি ২০১৯
৩)  ঐ, পৃ. ৫৪
৪)  ঐ, পৃ. ১০৭
৫)  ঐ, পৃ. ১১৪
৬)  ঐ, পৃ. ১৭২
৭)  ঐ, পৃ. ২৫১
৮)  ঐ, পৃ. ২৬২
৯)  ঐ, পৃ. ২৭৪