শপথবাক্য
যেদিন বৌ মারা গেল সেদিন থেকে সংসারের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হল স্বাধীনবাবুর। শ্রাদ্ধ-শান্তিপর্ব শেষ হতেই দ্বিতীয় বিয়ের প্রচার শুরু হল। ছেলে মেয়ে থাকা সত্ত্বেও আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের কোন যুক্তি গ্ৰাহ্যের মধ্যেই এলো না। ডিভোর্সি বা বিধবা হলেও চলবে। তবে কুমারী মেয়ে কিছুতেই নয়। কারণ, সে সন্তান দাবি করতে পারে।
দিদি-জামাইবাবু হন্যে হয়ে খোঁজ শুরু করলেন।দ্বিতীয় পর্বের পাত্রী খোঁজা যে কি যন্ত্রণাময় তা ভূক্তভোগীরাই টের পেয়ে থাকেন। দিদি-জামাইবাবু হাড়ে হাড়ে টের পেলেন। একটার পর একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে। কি করে আপনার শ্যালকের বৌয়ের মৃত্যু হল? আত্মঘাতী হয়নি তো?ইত্যাদি, ইত্যাদি.......। কোনো প্রশ্ন ক্রিকেট বলের মতো গুগলি হচ্ছে তো পরেরটা ইয়র্কার। এবড়ো-খেবড়োভাবে ব্যাট চালিয়ে প্রশ্নের উত্তর একবার দিদি দিচ্ছে তো পরেরটা জামাইবাবু।এভাবে বাউন্ডারি-ওভারবাউন্ডারি মেরে সবকিছু সামাল দিয়ে শেষ পর্যন্ত নট-আউট থেকে গেলেন। কয়েকটি পাত্রী দেখার পর অবশেষে এক ডিভোর্সি পাত্রী কনফার্ম হলো পাত্রীপক্ষের একটি শর্তের চুক্তিতে। শর্তটি হল - পাত্রকে একটি অতিরিক্ত 'শপথবাক্য' পাঠ করানো হবে। স্বাধীনবাবু একবাক্যে রাজি হয়ে গেলেন। মজার ব্যাপার হলো এক্ষেত্রে কোন পক্ষ থেকেই সোনা বা নগদ অর্থের কোন দাবি উঠল না। লক্ষ্য একটাই। যেন রক্তের স্বাদ পাওয়া বাঘের মতো এক ডিভোর্সি ও এক বিপত্নীক হিংস্র হয়ে আছে একে অপরের জন্য। অর্থ বা সোনা এখানে তুচ্ছ জিনিস। শুধু নারী নিরাপত্তার জন্যই অতিরিক্ত শপথবাক্য পাঠের দাবি! বুঝতে বাকী রইল না অভিজ্ঞ জামাইবাবুর। আরো মনে হলো - পাত্র ভালো চাকুরীজীবী হলেও এক্ষেত্রে পাত্রীর চেয়ে পাত্রের দাম কম। 'হাতি কাদায় পড়লে ব্যাঙেও লাথি মারে' অবস্থা। ঋষি প্রজাপতির প্রচলিত কোন ইচ্ছাই এখানে প্রযোজ্য নয়।
অতিরিক্ত শপথের জন্য জামাইবাবু নিজেকে অপমানিত বোধ করলেন। পাল্টা হিসেবে ঠিক করলেন,শ্যালকের দ্বিতীয় ফুলশয্যার আগে সেকেন্ডহ্যান্ড বৌকে নিম্নলিখিত শপথ বাক্য পাঠ করাবেন - 'আমি স্বর্গীয় শ্বশুরের নামে শপথ করিতেছি যে, সংসার ও নিজের স্বার্থে স্বামী ও শাশুড়ির আদেশ মানিয়া চলিব। সন্তানদের প্রতি যত্নবান থাকিব। সংসারের সর্বস্তরের কথা গোপন রাখিব।'
No comments:
Post a Comment