Wednesday, December 25

শোভন মণ্ডলের অণুগল্প : সমস্যা গুরুতর




শোভন মণ্ডল
সমস্যা গুরুতর


বিক্রমপুরের রাজা মহেন্দ্র সিংহ জরুরি সভা ডাকলেন। সমস্যা খুব গভীর। হন্তদন্ত হয়ে দশ মন্ত্রী  রাজসভায় হাজির। সকলের কপাল ভাঁজ। কী এমন সমস্যা, যে রাজার তলবী সভা ডাকতে হলো!
বহুদিন পর সভা। তাই সকলেই বেশ অপ্রস্তুত। কিন্তু ঠিক সময়ে চেয়ার গ্রহণ করলো সবাই।
রাজা রাজসিংহাসনে আগেই আসীন। মাথা হেঁট। কপালে হাত। গভীর চিন্তামগ্ন।
প্রধানমন্ত্রী শুধাল,  কোনো গভীর সমস্যা রাজামশাই?  যুদ্ধ-টুদ্ধর কোন খবর আছে?
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী তড়াক করে লাফিয়ে জানালো,  মোটেই না,  এরকম কোন খবর নেই। সব কিছুই শান্তিপূর্ণ।
প্রধান মন্ত্রী বললো,  তাহলে কি খাদ্য সঙ্কট?
কৃষিমন্ত্রী আপত্তি জানালো,  খাদ্য এখনো উদ্বৃত্ত।
রাজা একবার সবাইকে দেখে বিরক্ত হয়ে আবার মাথা নিচু করলেন।
সারা সভা চুপ। কোখাও কোনো শব্দ নেই। কোলাহল নেই।
সবাই নিঃশব্দে একে অপরের মুখ চাওয়াচায়ি করতে লাগলো।
তাহলে রাজার কি শরীর খারাপ?
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সে কথা জানতে চাইলো।  রাজা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নাড়লেন।
তারপর সবার মুখের দিকে একবার করে দেখলেন।
মৃদুস্বরে বললেন,  কোথাও কোন সমস্যা নেই আমি জানি। আর সেটাই বড় সমস্যা।
সবাই যেন আকাশ থেকে পড়লো। রাজা একি বলেন !
আবার বললেন,  সমস্যা যদি না থাকে তবে আমার থাকার প্রয়োজনটা কী ?  আমার থাকা আর না-থাকার কোন মানে নেই।
এই বলে মাথা নাড়তে থাকেন।
প্রধানমন্ত্রী বললো, মহারাজ তাতে সমস্যাটা কোথায়?
রাজা বললেন,  সামনের বছর ‘ বৃহৎ সভা’। মানে ওইদিন জনসাধারণের মুখোমুখি হবো আমি। সব কিছু যদি ঠিকঠাক থাকে,  দেশে যদি কোন সমস্যাই না থাকে তবে সভাতে জনগনকে কী বলবো?  কী প্রতিশ্রুতি দেবো?
সবাই অবাক। তাই তো। ঘোরতর সংকট। জনগনকে তো প্রতিশ্রুতি দিতেই হবে।
সমস্যা, অভাব-অনটন - এই সব না থাকলে রাজার কী গুরুত্ব?
রাজা বললেন,  আর বেশিদিন নেই। হাতেগোনা কয়েকদিন। এই কটা মাস আপনারা ‘সমস্যা’ তৈরিতে মন দিন । কিছুটা অভাব আনুন। সংকট আনুন। মন দিয়ে কাজে লেগে পড়ুন।

সেইদিন থেকে প্রশাসন ‘ সমস্যা ‘ জিইয়ে রাখতে তৎপর হলো।

No comments:

Post a Comment