Friday, May 3

ভ্রমণ : মৌপালী সাহা



বজ্র ড্রাগনের দেশ ভুটান


ভ্রমণ পিপাসু মন নিয়ে শহরের ক্লান্তি ও গরমের দাবদাহ থেকে বাঁচতে গত বছর গরমের ছুটিতে গিয়েছিলাম আমাদের পড়শি দেশ ভুটানে। সেখানে প্রকৃতি যে কতটা মায়াময়, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না ।   

ভুটান শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ 'ভূ উত্থান' থেকে যার অর্থ 'উঁচু ভূমি'। সেখানকার অধিবাসীরা নিজেদের দেশকে মাতৃভাষা জংকা ভাষায় দ্রুক ই উল বা বজ্র ড্রাগনের দেশ নামে ডাকে।

আমরা ভূটানে পৌঁছে phuntshiling immigration অফিসে permit করে একটা গাড়ি reserve করে চললাম রাজধানী থিম্পুর উদ্দেশ্যে। আশেপাশের অসাধারণ প্রাকৃতিক শোভা দেখতে দেখতে পাহাড়কে বন্ধু করে এগিয়ে চলছিলাম, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পাহাড় অধ্যুষিত শহর থিম্পু। আমাদের গন্তব্য থিম্পু, পুনাখা ও পারো। পরদিন সকালে অল্প বৃষ্টি হচ্ছিল, ওদের official building SAARC, তার উল্টো দিকে permit করতে হলো পুনাখার জন্য। তারপর গেলাম memorial chorten, ওদের এক অতি পবিত্র monastry। তিনতলা পর্যন্ত উঠলাম। রাস্তার দিকে মুখ করে আছে প্রহরারত বুদ্ধের মূর্তি। তারপর buddho point, বিশাল এক বুদ্ধ মূর্তি অনেক উঁচুতে।
শহরের সবখান থেকেই দেখা যায় সেই মূর্তি। ওখান থেকে নিচের পুরো থিম্পু শহরের সৌন্দর্য উপভোগ। আয়না কাঁচে reflection হচ্ছে চারদিকের monastry, বৃষ্টির ফলে নীচে reflect হচ্ছে অসাধারণ statue গুলো। ভেতরে বুদ্ধ ও তারপাশে বৌদ্ধ ধর্মের ধর্মপ্রচারকদের সুন্দর মূর্তি।
ভেতরে ফটো তোলা নিষেধ, তাই বাইরের অসাধারণ সৌন্দর্যের ফটো তুলে নীচে নেমে এলাম। পৌঁছে গেলাম library । চারদিকে প্রচুর ফুল। অনেক বড়ো বড়ো বিভিন্ন রঙের গোলাপ। সেখান থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়েই দূর থেকে দেখলাম রাজার বাড়ি, saarc building, tasiko জং। তারপর museum, বাঁশের জিনিস, চামড়ার জিনিস এইসব সাজানো-গোছানো দোকান। সেখান থেকে গেলাম handicraft factory, বিভিন্ন মুখোশ ও sculpture তৈরি হচ্ছে সেখানে। পরদিন বেরোলাম পুনাখার উদ্দেশ্যে।

অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ, চারদিকে পাহাড় ও মেঘের লুকোচুরি।
গেলাম পুনাখা জং। মোচু ও পোচু দুই  নদী দুইদিক থেকে এসে মিশে হয়েছে পুনাখা নদী। স্রোতস্বিনী নদীর একদিকে পাহাড়, জং এর সামনে অনেক ফুলের গাছ, নিচে নাম না জানা ফুলগুলো ঝরে পড়ে বিছানার মতো হয়েছে। জং এর ভেতরে গেলাম, ওখান থেকে বেরিয়ে আরও এগিয়ে চললাম suspension bridge। পুনাখা নদীর এপার ওপার যুক্ত করেছে এই ঝুলন্ত bridge। অবর্ণনীয় সৌন্দর্য, নদীর শব্দ, সবুজ পাহাড় সব কিছুকে সঙ্গে নিয়ে চললাম দোচুলা পাস। চতুর্থ রানী 108টা মিনার তৈরি করেছিলেন রাজার আয়ু বাড়ানোর জন্য। প্রতিটি মিনারের গায়ে রাজার ছবি লাগানো। দূর থেকে দেখলাম চিমি মনাস্ট্রি। সেখান থেকে চলেছি পারো । চারদিকে সবুজ পাহাড়ের মাঝে পারো উপত্যকা। যেদিকে তাকাই সবুজ পাহাড়, শান্ত এক পরিবেশ।  সন্ধ্যের পারো পাহাড়ের উপরে আলোকমালায় সজ্জিত হয়ে স্বপ্নপুরী।

পরদিন সকালে বেরিয়ে দূর থেকে দেখলাম tiger nest, সেটা পাহাড়ের উপর। এটা actually সারাদিনের ট্রেক রুট, তাই দূর থেকেই দেখতে হলো। এরপর kichulakhang, কথিত আছে এই মন্দিরে যা প্রার্থনা করা হয় সেই মনস্কামনা পূর্ণ হয়। মন্দিরের গায়ে কমলালেবুর গাছ। প্রচুর কমলালেবু ধরে আছে। ভিতরে গিয়ে প্রণাম করে ফিরে এলাম। গেলাম রিংপং জং, সেখানে ও গাছে ধরে আছে কমলালেবু। অনেকগুলো সিঁড়ি দিয়ে ভেতরে গেলাম। বাচ্চা লামারা প্রার্থনায় বসেছে । উপর থেকে নীচে দেখা যাচ্ছে পাহাড় ও তার মাঝে বহমান পারো নদী।
তারপর গেলাম museum। সেখানে বিভিন্ন রকমের পাখি, কিছু পাখিদের জীবাশ্ম, কিছু বাঘের চামড়া ঝোলানো,ওদের নানান অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হত এরকম বিভিন্ন মুখোশ ইত্যাদি দেখতে পেলাম । সেখান থেকে গেলাম Nya Mey zam bridge, নীচে পারো নদী বয়ে চলেছে। পেছনে রিংপং জং। এগিয়ে গেলাম পারো নদীর দিকে। ঠান্ডা জল। বসলাম পাথরের উপর। পেছনে পাহাড় পরিবেষ্টিত পারো উপত্যকার সৌন্দর্য উপভোগ করে পা বাড়ালাম airport, পাহাড়ের মাঝে ভুটানের airport। ভুটান রাজার দেশ, ওখানে সবাই বিনা খরচায় পড়াশোনার সুযোগ পায়, চিকিৎসা-পরিসেবা পায় । আমাদের ড্রাইভারের কাছে শুনে ওদের এক বিশেষ খাবার এমা দাসী খেলাম।

এবার ঘরে ফেরার পালা। অসাধারণ সৌন্দর্য ছেড়ে আসতেই মন চাইছে না, কিন্তু কর্মব্যস্ত জীবনে ফিরতেই হবে। তাই সকালে পারোকে বিদায় জানিয়ে ফিরছি ভুটান থেকে। সেই মেঘ ও পাহাড়ের লুকোচুরি, মেঘের মধ্যে দিয়ে চলেছি রাজার দেশ ছেড়ে অসাধারণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে। বিদায় ভুটান !
               








No comments:

Post a Comment