Friday, May 3

চন্দনা সান্যালের পাঠ প্রতিক্রিয়া : প্রবাসীর সাত সতেরো








সুখপাঠ্য বইটির পরিচয়পত্রে বলা আছে, আজন্ম কলকতাবাসী লেখিকা, বিবাহ পরবর্তী জীবনে, জন্মস্থান থেকে অনেক দূরে, ভারতের বিভিন্ন স্থানে দিন কাটিয়ে যে অমূল্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন, তারই একটি রম্যরচনা সংকলন এটি। বিশেষত "প্রবাসী বাঙালিমহলের টক -ঝাল-মিষ্টি অনুভূতি মেশানো জীবনযাত্রা, তাদের উৎসব পালন ও খাওয়াদাওয়ার" নানা ঘটনার ফুলে ফুলে মালাটি গেঁথেছেন লেখিকা~যে ফুলগুলির ঝলমলে হাসির আড়ালে অতি সূক্ষ্ম একটু বিষাদের ছোঁয়া।

২১টি ছোট বড় রচনার এই সংকলনে প্রথমটিই হলো প্রবাসী বাঙালির দীর্ঘ দিন পর কলকাতায় ফিরে bus এ চড়ার অভিজ্ঞতা। ছোট্ট ৩ পাতার লেখাটিতে আমাদের চির পরিচিত কলকাতার bus তার ভীড়, গরম, ঠেলাঠেলি, সাহায্যকারী কন্ডাক্টর, সরস টিপ্পনিকার সহযাত্রী সব কিছু নিয়ে এক্কেবারে নিখুঁত, জীবন্ত। তারই পাশাপাশি একদিন যে মানুষটি কৈশোর যৌবনে কলকাতায় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, তাঁর পক্ষে bus এ চড়ার অভ্যেস চলে যাওয়াটাকে মানতে না পারা, পরবর্তী প্রজন্মকে কলকাতার চরিত্রটা চেনানোর আকুলতা এবং শেষ পর্যন্ত bus এ চড়ার বিব্রতকর অভিজ্ঞতা পেরিয়ে ফেরার সময় মেয়েদের taxi ধরার জেদের কাছে নতিস্বীকার~এত বাস্তব, এত মনের কাছাকাছি যে হাসতে হাসতে একটা চোরা গোপ্তা দীর্ঘশ্বাস কিছুতেই এড়ানো যায় না।

প্রতিটি লেখা নিয়ে কথা বলার পরিসর এখানে নেই। বাকী লেখাগুলির বেশির ভাগই প্রবাসী বাঙালির বারো মাসে চোদ্দ পার্বণ পালন ও খাওয়াদাওয়া সম্পর্কিত। সব কটিই মন ছুঁয়ে যায়। আমরা যারা কলকাতাকে ভালোবাসি, এবং যাদের কখনো কলকাতার সঙ্গে বিচ্ছেদ বেদনা সইতে হয়নি, তাদের কাছে কিন্তু লেখিকা হাসি ঠাট্টার ভিতর দিয়ে নিপুণ ভাবে পৌঁছে দিয়েছেন প্রবাসীদের এই মনকেমন করা অনুভবটুকু। শুধু সরস্বতী পুজো, দুর্গা পুজো বা রবীন্দ্রজয়ন্তীই নয়, এই যে খুঁজে খুঁজে এক একটি পার্বণকে টেনে বের করে এনে দোল, রথযাত্রা এমনকি জামাইষষ্ঠী বা রামনবমী পর্যন্ত হৈ হৈ করে পালন করা, এ কি শুধুই হুজুগ? না তো!  এ হলো আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধব থেকে বিছিন্ন কয়েকটি বাঙালি পরিবারের পরষ্পরকে আত্মীয় বোধে আঁকড়ে ধরে নিঃসঙ্গতা ভোলার চেষ্টা, বাঙালি খাবারের স্বাদ ফিরে পাওয়ার, বাঙালি সংস্কৃতিকে ধরে রাখার চেষ্টা। শুরুতে তাই বলেছিলাম ঝলমলে ফুলের আড়ালে একটু ম্লান ছায়ার কথা।

এই পর্যন্ত পড়ে কেউ যদি বইটি সম্বন্ধে আগ্রহী হন,তাহলে সংগ্ৰহ করে পড়ে দেখতে পারেন। এই প্রসঙ্গের বাইরেও ভিন্ন স্বাদের লেখাগুলি নিজ গুণে রমণীয়।

ভালো লেগেছে সযত্ন প্রকাশনা। মুদ্রণপ্রমাদহীন ঝকঝকে  ছাপা, সুন্দর প্রচ্ছদ, সুবিধাজনক আকার। সব থেকে ভালো প্রকাশনা সংস্থার নামটি।


লেখক : ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য
প্রকাশক : দ্য কাফে টেবল

No comments:

Post a Comment