Friday, December 27

আলমগীর কবীর বাবলুর অণুগল্প : মানুষ বনাম.....





আলমগীর কবীর বাবলু
মানুষ বনাম.....

ঘোষপাড়ায় ঢুকতেই আমার মনে একটা সন্দেহ ঘনীভূত হল। ও মাথায় অবাঞ্চিত কিছু একটার আঁচ পাচ্ছিলাম। ষণ্ডামার্কা কিছু লোক রাস্তার দু' পাশে ঘোঁট পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওদিকে যাব কি যাব না ভাবছিলাম। শেষপর্যন্ত, কি হয় হবে ভেবে যাওয়াই মনস্থির করলাম। কিন্তু কপাল খারাপ, যা ভাবছিলাম এবং যার গন্ধ পাচ্ছিলাম শেষতক তাই ঘটে গেল। অর্থাৎ রিকশাটা যেই না ষণ্ডাদের কাছাকাছি এলো, অমনি ওরা পথ আগলে রিকশার গতিরোধ করল। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হতভম্ব। ভেতরে ভেতরে ঘামছি আর ভাবছি, দিনে দুপুরে এ কেমন বর্বরতা, প্রকাশ্য মাস্তানি! কিন্তু আমার ভাবনার পালে আচানক ঘাই বসিয়ে, রাগে কটমট করে তাকিয়ে ওদের পালের গোদাটি গর্জে উঠলো- ওই তোর নাম কি?
সন্ত্রস্ত আমি ঈষৎ আমতা আমতা করে বললাম-শরৎ। আর যায় কোথা! ওরা বুঝি এমন কিছুর জন্যই ভয়ানক মুখিয়ে ছিল! আমার নাম উক্ত হওয়া মাত্রই মানুষ অবয়বিক ঐ হিংস্র প্রাণীগুলো বাঘের মতো হালুম করে আমার উপর সবলে ঝাঁপিয়ে পড়ল! ব্যাপার কি, বুঝে ওঠার আগেই কিল-ঘুষি-লাথির এলোপাথাড়ি তান্ডব আমার সর্বাঙ্গে আছড়ে পড়ল! সঙ্গে না-খাস্তা গালির তুবড়িও ছুটল! ওদের সাঁড়াশি আক্রমণে আমি বোবা ও বোকা বনে গেলাম। ক্ষণিকের হতাশায় ডুবতে ডুবতে বোধবুদ্ধিশূন্য আমি অতঃপর অস্পষ্ট শুনলাম- মালুর বাচ্চা মালু, হিন্দু হয়ে মুসলমানের গায়ে হাত! আজ সব কয়টারে প্যাকেট করে ইন্ডিয়ায় পাঠাব। ওদের ভেদরেখাসূচক কথাগুলো কিংবা না-খাস্তা খিস্তিগুলো আমাকে যেন খেজুর কাঁটার মতো অনবরত খোঁচাচ্ছে। ফলে, কী এক দুর্বোধ্য কষ্টে-যন্ত্রণায় আমি পাথরের মতো নির্বাক, নিস্তব্ধ, প্রতিক্রিয়াহীন। বরং রাগে-ক্ষোভে,দুঃখে-অপমানে,ঘেন্নায়-ধিক্কারে নিজের জাত-পাত-সমগোত্রতা সব লুকালাম। তাছাড়া দেবতাতুল্য বাবাকে দোষ দিতেও মন চাইল না। যে বাবার অনেক কষ্টের ফসল এই আমি শরতের শুভ্র এক সকালে জন্মেছিলাম বলে বাবা তাঁর প্রিয় ঋতুর নামানুসারে আমার নাম রেখেছিলেন শরৎ; যিনি কর্মে-চিন্তায়-বিশ্বাসে ছিলেন উদার, মানবতাবাদী,অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল এবং যার দর্শন ছিল- ধর্মের চেয়েও মানুষ বড়, সেই পূজনীয় বাবার দর্শনকে মিথ্যে প্রমাণ করে কেন এই ধর্মান্ধ-বিকারগ্রস্ত-নরপশু-হায়েনাদের কাছে স্বীয় ধর্মপরিচয় দিয়ে নিজেকে এবং স্বর্গবাসী বাবাকে ছোট করব, খাটো করব! তাহলে কি মানুষের চেয়েও ধর্ম বড়? নাম বড়?

আমার বুকটা পাতাঝরা বৃক্ষের মতো হু হু করে উঠলো।




No comments:

Post a Comment