Thursday, December 26

তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অণুগল্প : খিদে






তপন বন্দ্যোপাধ্যায়
খিদে

পাঁচিল-ঘেরা বিশাল মাঠ, মাঠটা এক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের, সেখানে ভোর থেকে বেলা ন'টা-দশটা পর্যন্ত স্থানীয় মানুষজন আসেন স্বাস্থ্যোদ্ধারের আকাঙ্ক্ষায়। মুক্ত আকাশের নীচে কেউ ব্যায়াম করেন, কেউ মাঠের চারদিকে ঘোরেন, কেউ ব্যস্ত প্রাণায়ামে।

তাদের মধ্যে চোখে পড়ে দোহারা চেহারার একজনকে যার ব্যায়াম দেখে মনে হয় অটুট স্বাস্থ্যের অধিকারী। তাকে দেখলেই এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে থাকা তিনটে কুকুর ছুট্টে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে থাকে।

আসলে তার পকেটে থাকে বেশ কয়েকটি বিস্কুট, কুকুর তিনটে এলেই তিনি পকেট থেকে বার করে দেন সেই আহার্য। কুকুর তিনটে মহানন্দে খেতে থাকে আর লেজ নেড়ে কৃতজ্ঞতা জানাতে থাকে লোকটিকে। লক্ষ্যনীয় এই যে, বাইরের অন্য কোনও কুকুর গেট টপকে সেই বিস্কুটে ভাগ নিতে এলে তিনজনে একযোগে তাকে এমন তাড়া করে যে, সে প্রাণপণে ছুটে গেটের বাইরে।

দৃশ্যটা গা সওয়া হয়ে গেছে সবার।

হঠাৎ সেদিন একটি বাচ্চা কুকুর কী করে যেন গেটের মধ্যে ঢুকে পড়ে চলে এল বিস্কুটের গন্ধ শুঁকে শুঁকে। সাদা ধবধবে লোম, মিষ্টি তার হাবভাব। কুকুর তিনটেকে বিস্কুট খেতে দেখে কুইঁ কুইঁ। কুইঁ কুইঁ। হয়তো বলতে চাইলো, আমাকেও একটা বিস্কুট দাও না!

কুকুর তিনটে প্রথমে পাত্তাই দিতে চাইল না তাকে। বাচ্চাটা তবু ঘুরঘুর ঘুরঘুর। ঘ্যানঘ্যান। ঘ্যানঘ্যান। কুকুর তিনটে তাকে ঘেউ ঘেউ করে তাড়াতে চেষ্টা করল, কিন্তু বাচ্চাটা তখনও কুইঁ কুইঁ। কুইঁ কুইঁ। তিনটে কুকুর তখন তাকে চেপে ধরে এমন আঁচড়ে-কামড়ে দিল যে, বাচ্চাটা প্রায় মরো-মরো।

কোনও ক্রমে ছাড়া পেয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে, গোঙাতে গোঙাতে গেটের বাইরে গিয়ে কুইঁ কুইঁ করে কী যেন বলতে লাগল। হয়তো বলছিল, আমারও তো খিদে পায়!



No comments:

Post a Comment