Wednesday, December 11

সায়ন্তনী বসু চৌধুরীর অণুগল্প : পরি






সায়ন্তনী বসু চৌধুরী
পরি
                             

খুকু তখন কোলে করে তুলোর পুতুল আঁকড়ে ঘুমোতে যাবে। হঠাৎ জানালায় চাঁদ এসে হাজির।
-কই গো, ঘুমোলে বুঝি?
ঝুঁটি ঝাঁকিয়ে মাথা দুলিয়ে খুকু বলল,
-না তো। ঘুম তো আসেনা সহজে!
-কেন কেন?
-সারা মাথায় কিলবিল করছে কঠিন কঠিন অঙ্কের নিয়ম। আমার মাথা ব্যথা করেনা বুঝি?
চাঁদের গলা গম্ভীর হল। সে বলল,
-তাই তো! তাই তো! সমস্যা তো জটিল!
খুকুদের ঘরের জানালায় ছাই ছাই বিষণ্ণতা ছেয়ে গেল বেশ কিছুক্ষণের জন্য। কিন্তু খুকু স্বভাবচঞ্চল। একটু পরেই মনখারাপের পর্দা ছিঁড়ে গোল গোল চোখ বের করে সে উঁকি দিল। মুক্তার মত হাসি ছড়িয়ে রিনরিনে গলায় জিজ্ঞেস করল,
-আমাকে পরি দেখাবে বলেছিলে না? ভুলে গেলে?
বৃদ্ধ চাঁদের গলা অমনি সরল হয়ে গেল। বিজ্ঞের মত হেসে সে জবাব দিল,
-রোসো রোসো! ইচ্ছে হলেই কি পরি দেখা যায়? সে এক অদ্ভুত সময়! রাতের কালো কেটে দিনের আলো যখন ফুটব ফুটব করে, সে সময় চোখ খুলে থেক। যদি চোখে ঝিলমিল লেগে যায় বুঝবে পরি এসেছে।
খুকু তারপর জেগে রইল। চোখ বন্ধ করেই জেগে রইল। জেগে জেগে অনেক ভাবল। পরিরা এলে বুঝি চোখে ঝিলমিল আলো খেলে যায়? গায়ে কাঁটা দেয় কী না চাঁদ তো বলে গেল না! আচ্ছা, পরিরা কি কথা বলে? গান গায়? অঙ্কও কষে তার মত?
     
***
নদীর ধারে, পাহাড়ের গায়েই এক বিশালায়তন বটবৃক্ষ। অনেকটা মায়ের মত অবয়ব। মাটির অনেক অনেক গভীরে তার শিকড়। ঘন সবুজ তার পাতায় ঢাকা আঁচল। গাছের কোটরে কোটরে রংবেরঙের পাখিদের বাস। পরিযায়ীরাও আসে মাঝে মাঝে। গাছ তাদেরও ঘর দেয়। খিদে পেলে ফল দেয়। কিন্তু এহেন গাছ আজ শূন্য, বিবস্ত্র। পাতার আঁচল খসে পড়েছে তার পায়ের কাছে। মাথা নীচু করে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে গাছ। একে একে উড়ে গিয়েছে সব পাখি। 
বেলা হতেই খবর ছড়িয়ে পড়ল। লোকজন দলে দলে ছুটে গেল। গাছ মানুষের মা। মায়ের এমন অবস্থা হল কী করে? একদল জল ঢালল। একদল আনল ডাক্তার। ঔষধে পথ্যে মায়ের শুশ্রূষা শুরু করল কেউ কেউ। দিন, মাস বছর পেরিয়ে গেল, গাছ মা সাড়া দিল না। শেষে একদিন উৎকট দুর্গন্ধে গা গুলিয়ে উঠল এলাকাবাসীর। সাফাইকর্মীরা দিকে দিকে খবর ছড়িয়ে দিল। মানুষ স্তম্ভিত হয়ে দেখল, পচে যাওয়া পাতার স্তূপ থেকে বেরিয়ে এসেছে একটি পরির কঙ্কাল। তার গোটা শরীরে এতটুকু মাংসও অবশিষ্ট নেই। শুধু খুবলে খাওয়া ছেঁড়াখোঁড়া গোপনাঙ্গটা এখনও জীবিত। সেটাই সকলের দিকে তাকিয়ে দাঁত বার করে হাসছে।



No comments:

Post a Comment