Thursday, May 2

দেবায়ন চৌধুরীর অণুগল্প





যেখানে বিচ্ছেদ


হাতের মোবাইলটা নিয়ে মাঝেমাঝে বসে থাকে বিতান। সারাদিন কাজের পরে দু’দণ্ড কথা বলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। কেমন আছিস, ভালো আছি, দেখা হবে, ফেসবুকে পোস্ট দিস—গতানুগতিক শব্দবন্ধ। কারো কাছে মন উজাড় করে দেবে তো, সেই একদিন দুর্বলতাগুলিকে খোরাক করবে। খোরাক শব্দটি বিতান শিখেছিল ইউনিভার্সিটি লাইফে।


বন্ধুরা এখন সবাই প্রতিষ্ঠিত। সবাই খেয়েপরে আছে। কিন্তু সেই আন্তরিকতার স্পর্শ খুঁজে পায় না কারো কাছেই। এমনি করেই তো মানুষ বেঁচে থাকে। বেঁচে থাকাটা অভ্যাস। ভালো থাকা মানে আসলে কী ভাবতে ভাবতে পথ হাঁটে বিতান। চারপাশের বদলে যাওয়া দেখতে দেখতে ক্লান্তি যখন বাঁধ মানে না; তখন সব ছেড়ে চলে যায় জঙ্গলে। নদীর ধারে বসে দেখে মেঘের ছায়া। তিরতির করে হাওয়া বইছে। একটা পাথর নিয়ে ছুঁড়ে দেয় জলে। জলে কাঁপন লাগে। 


আপনজন বলতে একটা ফোন। কেউ কল করার নেই অকাজে। ইদানীং কাস্টমার কেয়ারের ফোন এলে ধরে। আগে ধরত না। গান বেজে যায়। নিজের পছন্দ করা গানের জন্য কোনোদিন বলা হয়ে ওঠেনি। বলবেও না। তবু এই রেকর্ডেড ভয়েসটাকেই মনে হয় বন্ধু। মেসেজ আসে —একা লাগছে? বন্ধু চান? প্রেস করুন... অসীম সংখ্যক সম্ভাবনা নিয়ে দশ ডিজিটের সামনে বসে থাকে বিতান। যে ফোন আর কোনোদিন আসবে না, তার নম্বর মুখস্থ রেখে কী লাভ?


আচ্ছা, মৃতেরা কোনোদিন কলব্যাক করে?





3 comments:

  1. পড়লাম ৷ ভাল লাগল ৷ তারুণ্যের বিষাদ বড় গভীর ৷ মনে চেপে বসতে দিও না ৷ তবু আবহমান থেকে বিষাদই সৃৃষ্টির প্রাণবায়ু আজও ৷৷

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ দাদা। আপনার মন্তব্য ভালো লাগল।

      Delete
  2. খুব ভালো লাগল দেবায়ন।

    ReplyDelete